সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দেশের অর্থনীতি শূন্যে, ক্র্যাশল্যান্ডিং হতে পারে বাজার ম‌নিট‌রিং জোরা‌লো করতে প্রধানমন্ত্রীর নি‌র্দেশ রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক মেয়েকে ঘুমে রেখে ফ্যানের সঙ্গে ফাঁসিতে ঝুললেন মা প্রধানমন্ত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশার স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করতে বলেছেন বঙ্গবন্ধু শান্তি পুরস্কার দেবে বাংলাদেশ, নীতিমালা অনুমোদন ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে শেখ হাসিনার শোক ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোক কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত, ইরানে পাঁচদিনের শোক ঘোষণা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইরানের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের পাহাড়ে অপহরণ চক্রের প্রধান অস্ত্রসহ গ্রেফতার নদীতে বালু উত্তোলনের সময় বজ্রপাতে দুই শ্রমিকের মৃত্যু ২৭ মে সারা দেশে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি অটোরিকশা চালকদের বারবার তলবের মুখে পড়া মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব যে কোনো শতাংশ ভোট পড়লেই খুশি: ইসি আলমগীর ডাকাতি করতে গিয়ে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ রাজধানীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ী নিহত

গুলশানে হামলার নিয়মিত আপডেট দিয়েছে আইএস!

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জিম্মি ঘটনার রক্তাক্ত অবসান ঘটেছে। ১২ ঘণ্টা ধরে চলা জিম্মি পরিস্থিতির সময়কালে জঙ্গি গোষ্ঠী তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ অনলাইনে হামলার নিয়মিত আপডেট দিয়েছে, যার অনেকগুলোই সঠিক ছিল।

বাংলাদেশে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটতে পারে এই আশঙ্কা করা হচ্ছিল গত দু’বছর ধরেই। বিশেষ করে গতবছরের ফেব্র“য়ারিতে লেখক ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দেশটিতে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি উপলব্ধি করা যাচ্ছিল। অভিজিৎ হত্যার পর একের পর এক ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্টকে কুপিয়ে খুন করা হয় গতবছর। খুন হন দু’জন বিদেশিও।

চলতি বছর খুনের পরিধি বাড়তে থাকে। ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্টদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু, সমকামীদের খুন করা শুরু হয়। মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় দু’টো জঙ্গি গোষ্ঠী এ সব হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। একটি আনসার-আল ইসলাম, যারা আল-কায়েদার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার দাবি করে, অন্যটি তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস।

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য সেদেশে বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি গতকাল পর্যন্ত স্বীকার করেনি। যদিও ‘ইসলামিক স্টেট’ বাংলাদেশে তাদের জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরপরই সেসবের দায় স্বীকার করেছে। বিস্তারিত টুইটে জানিয়েছে কেন, কাকে হত্যা করা হয়েছে।

বড় হামলার ইঙ্গিত আগেই ছিল

গত কয়েকমাসে ‘ইসলামিক স্টেট’-এর কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশকে তারা তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিল। তাদের প্রোপাগ্যান্ডা ম্যাগাজিন ‘দাবিকে’ একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাস নিয়ে। জঙ্গি গোষ্ঠীটি গত কয়েকমাসে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান নিয়ে যতকথা বলেছে, তারচেয়ে বেশি বলেছে বাংলাদেশ নিয়ে। এমনকি রমজানের সময় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের হামলা পরিকল্পনার মধ্যে বাংলাদেশের উল্লেখ ছিল। তাদের সর্বশেষ প্রকাশিত হিটলিস্টেও বাংলাদেশের নাম রয়েছে।

বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন।

‘ইসলামিক স্টেট’ কার্যত জানান দিয়েই বাংলাদেশে তাদের জঙ্গি তৎপরতা পরিচালনা করছে। তার এক বড় প্রমাণ শুক্রবার রাতে গুলশানে স্প্যানিশ হোলি আর্টিজান বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনা। এই হামলা চলাকালে প্রায় সব খবরই ‘ইসলামিক স্টেট’-এর স্বঘোষিত সংবাদ সংস্থা ‘আমাক’ সবার আগে জানিয়েছে। বিস্ময়কর হচ্ছে, সেসব খবর যে ভুয়া ছিল না, তা প্রমাণ হতে বেশি দেরি লাগেনি। কয়েকটি উদাহরণ দেই চলুন।

গুলশানে হামলার আপডেট প্রকাশ করেছে জঙ্গিরা

গুলশানে রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালানোর কিছুক্ষণ পরেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সে সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সব খবর লাইভ প্রচার হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাবে, এই যুক্তিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কার্যত হালনাগাদ খবর প্রকাশ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

ততক্ষণে অবশ্য গোটা বিশ্বের নজর গুলশানের দিকে। আর খবরের উৎস হয়ে ওঠে জঙ্গিদের সংবাদ সংস্থা আমাক। বাংলাদেশ সময় রাত একটার দিকে জঙ্গি গোষ্ঠীটি জানায়, তাদের জঙ্গিরা ঢাকার গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে। প্রথমে ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর অ্যাপ টেলিগ্রাম ব্যবহার করে প্রকাশিত সেই খবর টুইটারে প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কাৎস।

আমাক পরবর্তীতে গুলশানে হামলার একাধিক আপডেট জানায়। বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টার দিকেই তারা জানিয়ে দেয়, গুলশানের রেস্তোরাঁয় বিশজনের বেশি বিভিন্ন দেশের নাগরিককে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। টেলিগ্রাম থেকে সে খবর নিয়ে টুইটারে জানায় সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, জঙ্গিরা যখন এসব খবর দিচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী জানাচ্ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নকথা। স্থানীয় গণমাধ্যমে তাদের বরাতে জানানো হচ্ছিল, প্রাণহানি রোধে জঙ্গিদের সঙ্গে ‘নেগোশিয়ট’ করার চেষ্টা চলছে। একটি গণমাধ্যমে এটাও বলা হচ্ছিল যে, ঘটনাস্থলের একটি ম্যাপ তৈরির চেষ্টা করছে পুলিশ। অথচ গুগল ম্যাপসে সেই হোটেলের পুরো ম্যাপ রয়েছে, স্ট্রিটভিউতে দেখা যায় হোটেলের ভেতরের সবকিছু!

সংবাদের অন্যতম উৎস আমাক

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবশ্য ততক্ষণে আমাকের নিউজ দিয়েই শিরোনাম করছিল। সিএনএনে এক বিশেষজ্ঞ আমাকের নিউজের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন, হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এটা ‘আল-কায়দার’ কাজ, ‘ইসলামিক স্টেট’-এর নয়।

এ সব জল্পনাকল্পনার মধ্যেই আমাক প্রকাশ করে গুলশানে হোটেলের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা কিছু মানুষের ছবি। বাংলাদেশ সময় ভোর সোয়া ছয়টার দিকে প্রকাশিত সেসব ছবিতে দেখা যায় রক্তাক্ত মেঝেতে দশটির মতো মরদেহ পরে আছে। একটি ছবিতে ‘বসুন্ধরা এলজি গ্যাসের সিলিন্ডার’ দেখা যায়, যেটা ঘরের মধ্যে রাখা হয়েছে। অনলাইনে জিহাদিদের গতিবিধির দিকে নজর রাখা ব্যক্তিরা সেগুলো পরীক্ষা করেন দ্রুত। তাতে দেখা যায়, ছবিগুলো আসল। গুলশানের হোটেলে অনেককে হত্যার পর সেসব ছবি জঙ্গিরাই পাঠিয়েছে আমাকের কাছে, আমাক প্রকাশ করেছে সেগুলো নিজস্ব চ্যানেলে। ছবিগুলো বেশি রক্তাক্ত হওয়ায় এখানে প্রকাশ করা হলো না।

আমাক যখন ছবি দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিল, বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিককে জবাই করা হয়েছে গুলশানের রেস্তোরাঁয়, তখনও বাংলাদেশের গণমাধ্যম জানাচ্ছিল, জঙ্গিদের আত্মসমর্পন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।

সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের পুলিশ স্প্যানিশ রেস্তরায় চূড়ান্ত অভিযান চালায় বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। আর সেখানে কমপক্ষে ২০ জন বিদেশি খুন হওয়ার বিষয়টি সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয় বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার পর।

উগ্রপন্থিদের বর্বর হামলার ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায় আমাকের প্রকাশিত ছবি তিনটি দেখে। জঙ্গিদের হামলার পর হোটেলটির অভ্যন্তরের অবস্থার আর কোনো ছবি কোনো মাধ্যমেই এখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি। ফলে আসলে ঠিক কতজনকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে সেটা পরিষ্কার হতে আরো সময় লাগবে।

পুরো ঘটনা পর্যালোচনা করলে দু’টি বিষয় পরিষ্কার। প্রথমত, বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ‘ইসলামিক স্টেট’-এর হুমকিকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর এ ধরনের হামলার সময় করণীয় নিয়ে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

সেটা না হলে, বিদেশিদের খুন করার উদ্দেশ্যে রেস্তোরাঁয় যাওয়া কয়েকজন জঙ্গিকে ১২ ঘণ্টা সময় দেয়ার মতো বোকামি তারা হয়ত করতো না।

বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র:ডয়েচে ভেলে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com