গুলশানের ফু ওয়াং বোলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড ৪১ কোটি আট লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বারের মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধান করার জন্য শুল্ক গোয়েন্দাকে চিঠি দিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
ফু ওয়াং বোলিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিঃ বারটি ৪১১, গুলশান- তেজগাঁও-লিংক রোডে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে বারে মদ ও মদ জাতীয় দ্রব্য বিক্রয় এবং রেস্টুরেন্টে খাবারের সেবা দেয়।
ভ্যাট গোয়েন্দারা অনুসন্ধানে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হতে সি.এ. রিপোর্ট ও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট সার্কেল অফিস থেকে মূসক সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করে। এসব দলিলাদি আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। এতে দেখা যায়, ফু ওয়াং বার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত।
ভ্যাট গোয়েন্দারা ধারণা করছেন বারে ব্যবহার করা মদজাতীয় পণ্য সংগ্রহ ও বিক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করার জন্য এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দাকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উদঘাটিত মূসকের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য কয়েক দফায় সময় দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখেনি বলে জানান মইনুল খান।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে একাধিকবার এ সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করলেও চাহিদা মোতাবেক দলিলাদি দাখিল থেকে বিরত ছিল। নিজের প্রতিশ্রুত সময়সীমা নিজেই ভঙ্গ করে এবং শুধুমাত্র সময় প্রার্থনা করে তদন্তে কালক্ষেপণ করে।
তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক অডিট রিপোর্টে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে ১৬২ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ লাখ ৩১৯ টাকা। এই মূল্যকে মূসকসহ বিবেচনা করে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য নির্ণয় করা হয় ১৪১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬০ টাকা। কিন্তু দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করা হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ ৩৮ হাজার ৫৮২ টাকা।
এক্ষেত্রে ফুওয়াং বারটি বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে ১৩৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৮ টাকা। বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ২০ কোটি ৮৯ লাখ ১০ হাজার ৪৭২ টাকা উদঘাটন করা হয়।
এ ফাঁকির ওপরও ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১৫ কোটি ৭৫ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯২ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
এছাড়া, তদন্ত দেখা যায় এ মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি উৎসে কর্তন খাতে কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ভ্যাটের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৩১ টাকা। আগে কোনো ভ্যাট পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ দুই কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার ২৩১ টাকা আদায়যোগ্য।
উৎসে কর্তন বাবদ এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯২২ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
অপরদিকে, স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে অপরিশোধিত মূসকের পরিমাণ ৪৩ লাখ ১১ হাজার ৫৮ টাকা উদঘাটন করা হয়।
অফিস, স্থান-স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে এ ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ২৩ কোটি ৭০ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬১ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৯ টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৮ লাখ ৮ হাজার ২৪০ টাকা সরকারি রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌসী মাহবুবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এই তদন্ত সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরের তথ্য তদন্ত করে তদন্ত দল।
মইনুল খান জানান, তদন্তে উদঘাটিত পরিহার করা ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্যের কোনো অপব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত মানিলন্ডারিং হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, এ সংক্রান্ত আয়কর নথিতে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তাও অনুসন্ধান করার জন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলকে (সিআইসি) অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ