বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: প্রত্যেক মুসলমান মারা যাওয়ার পর তার রুহের মাগফেরাতের জন্য যে বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ পড়া হয় তার নাম জানাজার নামাজ। অত্যন্ত ভাবগম্ভীর ও অনাড়ম্বর পরিবেশে এ নামাজ আদায় করা হয়। মৃতের রুহের মাগফেরাত কামনায় জানাজা আদায় করা জীবিতদের জন্য শরিয়ত নির্ধারিত দায়িত্ব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একজন মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে। সালামের উত্তর দেয়া, অসুস্থের খোঁজ খবর নেয়া, জানাজায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জবাব দেয়া।’
শরিয়তের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কেফায়া। কোনো এলাকায় যদি কাউকে জানাজার নামাজ ছাড়া দাফন করা হয় তাহলে ওই এলাকার সবাই গুনাহগার হবে। জানাজার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। এর অন্যতম শর্ত হলো, মৃতের লাশ অবশ্যই জানাজাস্থলে উপস্থিত থাকা।
ইদানীং আমাদের সমাজে গায়েবানা জানাজা আদায়ের প্রবণতা বাড়ছে। যেহেতু এক জায়গায় একত্রিত হয়ে সবাই মিলে তার জানাজার নামাজ পড়া সম্ভব নয় সে কারণে মৃত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার গায়েবানা জানাজা পড়া হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বড় কোনো নেতা, আলেম বা পীর-মাশায়েখ মারা গেলে তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মান থাকার কারণে তার জানাজার নামাজ পড়তে আগ্রহবোধ করেন অনেকেই। কিন্তু গায়েবানা জানাজা জায়েজ কি না বিষয়টিকে কেউ ক্ষতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন না।
যেহেতু জানাজার নামাজ একটি ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় তাই ধর্মীয় শর্তাবলী ও বিধি-বিধান মেনেই তা পালন করা উচিত। এর অন্যথা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ধর্মে নতুন কোনো বিষয় সংযোজন ভয়াবহ পাপের কাজ। সব মাজহাবের স্কলারদের সিদ্ধান্ত হলো, লাশ অনুপস্থিত রেখে গায়েবানা জানাজা জায়েজ নয়। গায়েবানা জানাজা পড়া হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত পরিপন্থি কাজ। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় দূর-দূরান্তে বহু সাহাবা ইন্তেকাল করেছেন; কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাজা পড়েননি। বিষয়পি শরিয়ত অনুমোদন করলে রাসুল অবশ্যই আদায় করতেন। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হলে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করতে হলে শরিয়ত অনুমোদিত পন্থায় যাবতীয় শর্ত-শরায়েত মেনেই জানাজা পড়তে হবে। অন্য কোনোভাবে নয়। এ বিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্কতা জরুরি। নিছক রাজনৈতিক কারণে একটি ধর্মীয় বিধানে বিকৃতি আরোপ কাম্য নয়।
আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের সমাজে ইদানীং একাধিকবার জানাজা পড়া একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মৃত ব্যক্তির জানাজার ক্ষেত্রে মূলত নবি করিম (সা.)-এর হাদিসের মাধ্যমে যেটা সাব্যস্ত হয়েছে সেটি হলো, একবারই জানাজা হবে। কিন্তু বিশেষ কারণে বা প্রেক্ষাপটে যদি কারো জানাজা দ্বিতীয়বার করার দরকার হয়, তাহলে সেটি জায়েজ।
কিন্তু জানাজা মূলত একবারই হবে। জানাজার দুইবার, তিনবার করার দরকার নেই। যদি এমনটা হয় যে, একজন শহরে মারা গেলেন। শহরের লোকেরা তাঁর জানাজায় অংশগ্রহণ করতে চায় কারণ তারা গ্রামে যেতে পারবে না। আবার গ্রামে গেলে সেখানকার লোকেরা আবার জানাজা পড়তে চায়, সেটা বিশেষ কারণে হয়তো হতে পারে। তবে একবার হওয়াটাই হচ্ছে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ এবং সেটাই মূলত আজকের এই যুগ পর্যন্ত সালফেস সালেহিনের আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, এভাবেই জানাজা হয়েছে। বিশেষ অবস্থায় বিশেষ পরিস্থিতিতে একাধিকবার পড়া যেতে পারে।
তবে কোনো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হলে একাধিকবার যদি কেউ জানাজা পড়ে থাকে, তাহলে কোনো গুনাহ নেই। কিন্তু সেটা উত্তম বা সুন্নাহ নয়।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস