বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: আজ রোববার থেকে ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে এক হাজারের মত তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে।পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন ‘সীমিত পরিসরে আঞ্চলিক পর্যায়ে’ কারখানা খোলার কথা বললেও, শ্রমিকেরা বলছেন বেশিরভাগ কারখানাতেই পুরোদমে কাজ হয়েছে।
বাংলাদেশে পোশাক কারখানার অভ্যন্তরে যে ধরনের অবকাঠামো থাকে, তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা নির্দেশনা অর্থাৎ সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মেনে যতটা শারীরিক দূরত্ব রেখে কাজ করা উচিত, তার ব্যবস্থা একেবারেই নেই।
অর্থাৎ সেলাই মেশিন বসানোর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকলেও তা এক হাতের বেশি নয় অধিকাংশ কারখানায়।এছাড়া সুতা কাটা, ফিনিশিং বিভাগ এবং প্যাকিং-এর কাজ যেসব বিভাগে হয়, সেখানে একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব কমই থাকে।
সরকার বলছে, শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই কারখানায় মনিটরিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ইতিমধ্যে একটি আট সদস্যের কেন্দ্রীয় পরিদর্শন কমিটি করা হয়েছে।
“মন্ত্রণালয় থেকে একটা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যেখানে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুইজন, শ্রম অধিদফতরের দুইজন, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের দুইজন কর্মকর্তা থাকবেন।
”এই কমিটির সাথে আমাদের নিয়মিত পরিদর্শন দলও পরিস্থিতি মনিটর করবে এবং দেখবে যাতে কারখানায় শ্রমিকের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না,” জানাচ্ছেন শিবনাথ রায়।
শ্রমিকের সুরক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই কিছু নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে কারখানাগুলোতে, যার মধ্যে রয়েছে- কারখানায় প্রবেশের মুখে শ্রমিকের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। এছাড়াও বলা হয়েছে হ্যান্ড হেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রমিকের মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস এবং কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।শিবনাথ রায় আরও বলেন, যেসব কারখানা নিয়ম মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেই বন্ধ পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার জন্য মালিকদের একটি অংশ গত সপ্তাহ দুয়েক ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন।
এর বাইরে গার্মেন্ট বায়িং হাউস সমিতিও কারখানা খোলার দাবি জানিয়েছিল।এখন বিজিএমইএ বলছে, তাদের সদস্য চার হাজারের বেশি কারখানার মধ্যে এক হাজারের মত কারখানা খোলা হয়েছে।
এর আগে কাজ শুরু করতে চায়, এমন কারখানার একটি তালিকা করেছিল বিজিএমইএ। সে তালিকা অনুযায়ী আজ অঞ্চল ভিত্তিতে কারখানা খোলা হয়েছে, যেমন রোববার প্রধানত ঢাকা ও এর আশেপাশের কারখানাগুলো খোলা হয়েছে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, ‘অকুপেশনাল হেলথ অ্যান্ড সেফটি কমিটি’ আছে প্রতিটি কারখানায়, ফলে শ্রমিকের সুরক্ষার দিকটি তারা নিশ্চিত করবে।
“যেহেতু আমাদের কাছে তালিকা আছে, সে তালিকা আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শেয়ার করেছি, যাতে যেকোন সময় তারা দেখতে পারে। ফলে কেউ যদি নিয়ম ভাঙ্গে, তাহলে তাকে চিহ্নিত করা সমস্যা হবে না। আর কেউ যদি নিয়ম না মানে, সে কাজ করতে পারবে না বা রপ্তানি করতে পারবে না- এটাই হবার কথা।”
কিন্তু যদি কাজ করতে এসে কোন শ্রমিক করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে তার দায়িত্ব কে নেবেন, সে বিষয়ে সংগঠনটির একাধিক নেতার কাছে প্রশ্ন রাখলেও সরাসরি জবাব দেননি কেউ।
গত এক মাস যাবত বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া সাধারণ ছুটি চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।
এর মধ্যে আজ ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় এক হাজারের মত পোশাক কারখানা চালু হয়েছে।যে কারণে ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে গত এক মাসের চেয়ে রোববার সকাল থেকেই বেশি ভিড় দেখা গেছে।একজন শ্রমিক বলছিলেন, কারখানায় গিয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা পাননি তারা।
“আমাদের কারখানায় সাড়ে আটশো শ্রমিক আছে, কিন্তু ঢোকার মুখে হাত ধোয়ার জন্য মাত্র দুইটা সাবান ছিল। জ্বর দেখে নাই কারোই, আর অনেকের মাস্ক থাকলেও, কারোরই গ্লাভস ছিল না।”
তিনি আরো বলেন, “ভিতরে আমাদের সেলাই মেশিনগুলার মধ্যে একটু দূরত্ব থাকলেও, সবাই এক হাত দূরত্বে বা আরো কাছে কাছে কাজ করে।”
অন্যদিকে, বকেয়া বেতন এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করার দাবিতে আজ ঢাকা, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় কিছু কারখানায় বিক্ষোভ হয়েছে।
সাধারণ ছুটির কারণে কার্যত লকডাউন পরিস্থিতিতে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।যে কারণে কারখানা খোলার ঘোষণা শুনে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম না মেনে হাজার হাজার কর্মী দলবেঁধে পায়ে হেঁটে, ট্রাকে বা পিকআপে চড়ে ফেরত আসায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়েছে।
প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি শেষ হবার কথা ছিল ৪ঠা এপ্রিল, তারপর দিন, পোশাক কারখানা খোলার একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তখন একেবারে শেষ মুহূর্তে সেটি বাতিল করা হলেও ততক্ষণে ঢাকা এবং আশেপাশে যেসব স্থানে পোশাক কারখানা আছে, সেখানে পৌঁছেছেন হাজার হাজার শ্রমিক।
এরপর গত কয়েক সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুরে বেশ কয়েকজন পোশাক শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর পাওয়া গেছে।এখন শ্রমিকগুলো বলছে, কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে শ্রমিকদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, একে তো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভাইরাস সংক্রমণের জন্য মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ সময় , তার মধ্যে সার্বিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না করেই কারখানা খুলে শ্রমিকদের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ানো হলো।
“কারখানার ভেতরের পরিবেশ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মত নয়। অনেক মানুষ একটি বা দুইটি টয়লেট ব্যবহার করেন। এর বাইরে শ্রমিকেরা যেখানে থাকেন, সেখানেও তারা এক রুমে অনেকজন থাকেন, সেখানে রান্না ও গোসলের আলাদা ব্যবস্থা থাকে না। এসব কারণে তাদের ঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে গেল।”মিজ তালুকদার শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য সরকারকে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানান।
বাংলা৭১নিউজ/তথ্যসূত্র: বিবিসি অনলাইন