গাজার বড়চেয়ে বড় আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, সেখানে এখন পানি ও অক্সিজেন নেই এবং রোগীরা তৃষ্ণায় চিৎকার করছে।
ইসরাইলি ট্যাংক হাসপাতালটি ঘিরে আছে আর ওপরে ঘুরছে ড্রোন। হাসপাতালের ভেতরে দ্বিতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালিয়েছে সৈন্যরা। হাসপাতালের ভেতরে আটকে পড়া একজন সাংবাদিক বিবিসির রুশদি আবু আলৌফকে ফোনে জানিয়েছেন, যে ‘ইসরাইলি সৈন্যদের সব জায়গায় দেখা যাচ্ছে এবং তারা সব দিক থেকে গুলি করছে।’ তবে বিবিসি নিরপেক্ষভাবে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
অন্যদিকে, ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা গাজায় এক পণবন্দীর লাশ পেয়েছে। ৬৫ বছর বয়সী ইয়েহুডিত ওয়েইসকে ৭ অক্টোবর (শনিবার) আটক করে নিয়ে এসেছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ইসরাইল সেখানে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং তারা হামাসের একটি টানেলের সংযোগস্থলের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছে।
আল শিফা হাসপাতালের সবশেষ অবস্থা
হাসপাতালটির পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া জানিয়েছে, আল শিফার অবস্থা ‘ভয়াবহ’, যেখানে এখনো সাড়ে ছয় শ’ রোগী, পাঁচ শ’ চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং পাঁচ হাজার বাস্তুচ্যূত মানুষ অবস্থান করছে।
গত বুধবার থেকে সেখানে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী এবং বৃহস্পতিবার তারা সেখানে হামাসের টানেলের একটি সুরঙ্গের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে। একইসাথে অস্ত্রবোঝাই একটি গাড়ি পাওয়ার কথাও জানায় তারা।
হাসপাতালটির পরিচালক জানান, ইসরাইলি সেনারা হাসপাতালটির প্রধান পানির সংযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, ‘অভিযান চলছে। কেউ এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে পারছে না। আমরা আমাদের সহকর্মীদের সাথেও কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না।’
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পুরো মেডিক্যাল কমপ্লেক্সটির দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথে একটি অংশ বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে সেনারা।
এক পণবন্দীর লাশ পাওয়ার দাবি
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, গাজায় হামাস আটক করে রেখেছিল এমন একজন নারীর লাশ উদ্ধার করেছে তাদের সৈন্যরা।
ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, ৬৫ বছর বয়সী ইয়েহুডিত ওয়েইসের লাশ আল শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন একটি ঘর থেকে উদ্ধার করেছে তারা।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় তাকে যখন আটক করে নেয়া হয় তখন তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তার স্বামী শমুয়েলকে বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছিল। ইসরাইল জানিয়েছিল, মোট ২৪০ জনকে হামাস আটক করেছে।
ইয়েহুডিত ওয়েইসের কিবুতযের একটি কিন্ডারগার্টেনে কাজ করতেন।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ওই নারীর লাশ যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে কালাশনিকভ রাইফেল ও রকেট চালিত গ্রেনেড পেয়েছে তারা।
দুঃখজনকভাবে ইয়েহুডিত গাজার সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছে এবং আমরা সময়মতো তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি।
আরো লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে লিফলেট ফেলে লোকজনকে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সেখানে কমপক্ষে চারটি শহরে এ ধরনের লিফলেট ফেলা হচ্ছে।
ওই দিকে দিনের বেশিরভাগ সময়েই গাজায় মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা কাজ করছে না। টেলিকম কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, জ্বালানির অভাবে তারা তাদের কার্যক্রম চালাতে পারছে না।
এমনকি জ্বালানি তেলের সঙ্কটের কারণে ত্রাণ কার্যক্রমেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে মিশর সীমান্ত থেকে ত্রাণসামগ্রী আনার জন্য ট্রাক পাঠানো সম্ভব হবে না।
পশ্চিম তীরের কী অবস্থা
ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনী তিন বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এসব বন্দুকধারীরা পশ্চিম তীর থেকে জেরুসালেমের দিকে যাওয়ার একটি চেকপয়েন্টে গুলি শুরু করেছিল।
এ ঘটনায় ইসরাইলের একজন সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা দাবি করেছে তারাই ওই হামলা চালিয়েছে। এছাড়া জেনিন শহরেও আবারো ইসরাইলি অভিযানের খবর পাওয়া গেছে।
আল-আহলি হাসপাতালে আটকা পড়েছে রেড ক্রিসেন্ট দল
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, সংস্থাটির একটি মেডিক্যাল সার্ভিসেস টিম আল-আহলি হাসপাতালের ভেতরে আটকা পড়েছে।
সেখানে তাদের কর্মীরা প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শুনছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা জানিয়েছে, ‘হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। আমাদের দলটি এর ৩০ মিটারের মধ্যেই অবস্থান করছিল। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।’
এরপর থেকে এ ঘটনার আর কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি। ইসরাইলের দিক থেকেও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি।
সিনিয়র হামাস নেতাদের ওপর হামলার দাবি
ইসরাইল দাবি করেছে গাজার দু’টি ভূগর্ভস্থ এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে হামাসের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে তারা।
সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলছিলেন, ‘হামাসের কয়েকজন সিনিয়র কমান্ডার এসব জায়গায় লুকিয়ে আছে। এর মধ্যে হামাসের নর্দার্ন গাজা ব্রিগেডের প্রধান আহমেদ রান্দোর এবং হামাস রকেট ব্রিগেডের প্রধান হাইমান সিয়ানও আছে।’ তিনি জানিয়েছেন, এর বাইরে আরো একটি ভূগর্ভস্থ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। সেখান হামাসের আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবস্থানের কথা জানান তিনি ।
সূত্র : বিবিসি
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ