ইসরায়েল এবং হামাস চলতি সপ্তাহে ছয় জিম্মিকে মুক্ত করার চুক্তিতে পৌঁছানোর পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরতে শুরু করেছে। শনিবার ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত নেটজারিম করিডোর অতিক্রম করেছে। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।
শনিবার হামাস চার ইসরায়েলি নারী সৈন্যকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু ইহুদ নামের এক বেসামরিক নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়নি। এ কারণে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। এদিকে ইহুদ এবং অন্য দুই জিম্মিকে বৃহস্পতিবার মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এরপর শনিবার আরও তিনজনকে মুক্তি দেওয়া হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের পর অবশেষে বাড়ি ফেরার সুযোগ পেলেন ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে পায়ে হেঁটে আল-রশিদ স্ট্রিট এবং সকাল ৯টা থেকে গাড়িতে করে সালাহ আল-দিন স্ট্রিট অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
হামাস শুক্রবারের মধ্যে নারী ইসরায়েলি বন্দী আরবেল ইহুদ এবং অন্য দুজনকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে বলে কাতারের ঘোষণা আসার পরই ফিলিস্তিনিদের উত্তরাঞ্চলে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জর্ডানের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই পরিকল্পনা দুই মার্কিন মিত্র দেশের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের ইস্যুকে ‘প্রশমিত’ করার উদ্দেশ্য ছাড়া কিছু নয়।
ট্রাম্প শনিবার (২৬ জানুয়ারি) বলেছেন, ‘গাজা পরিষ্কার করা’ একটি বিকল্প হতে পারে, যেখানে আরব দেশগুলোর সহযোগিতায় উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন স্থানে আবাসন তৈরি করা যেতে পারে। এটি ‘অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি’ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জর্ডান ইতোমধ্যে প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর আশ্রয়স্থল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি নিয়ে আমাদের অবস্থান দৃঢ় এবং তা বদলাবে না। জর্ডান শুধু জর্ডানের জন্য এবং ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদের জন্য।
জর্ডানের বিশিষ্ট বিশ্লেষক ওরাইব রান্তাওয়ি বলেন, এই প্রস্তাব শুধু জর্ডান ও মিশরের ওপর চাপ প্রয়োগের বার্তা নয়, বরং এটি একটি ‘বিষময় উপহার’, যা আরব দেশগুলোর ওপর ফিলিস্তিন সংকটের দায় চাপানোর কৌশল।
প্রতিবেশী মিশরও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ পরিকল্পনার স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার যেকোনো চেষ্টা, তা সাময়িক হোক বা স্থায়ী, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রস্তাব ইসরায়েলের ডানপন্থি নীতির প্রতিফলন এবং মানবিকতার আড়ালে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। মিশর সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাস অনুযায়ী সাময়িক পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ