বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ক্ষমতা কোনো মামুর বাড়ির বিষয় না। ক্ষমতা জাতির পক্ষ থেকে বিশাল আমানত। এ আমানত আল্লাহ কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করেন।’
তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর দুঃশাসনের বাংলাদেশ ছিল। শেষ পর্যন্ত দুপুরবেলা রান্না ভাতও খেয়ে যেতে পারলেন না।’
শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চুয়াডাঙ্গা টাউন মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আরেকবার যুদ্ধের জন্য সবাই প্রস্তুত হন। গাছ খারাপ বলে গাছ কাটা পড়েছে। কিন্তু আগাছা রয়ে গেছে। এগুলোকেও পরিষ্কার করা হবে, ইনশাআল্লাহ।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষের সামনে মুখ দেখানোর সৎ সাহস তাদের নেই বলে তারা পালিয়ে গেছে। আপনারা ফিরে আসেন। আমরা আপনাদের বিচারটা দেখতে চাই। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসলে চলে আসেন। আমরা কাশিমপুরে আপনাকে ভালো জায়গা করে দেব। আপনি এদেশের বিরোধী দলের দেশপ্রেমিক নেতাকর্মীকে নির্বিচারে খুন করেছেন। বিচারের নামে প্রহসন করে অনেককে খুন করেছেন।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। প্রথম ভোটকে (২০১৪) মানুষ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলো। ২০১৮ সালে করলেন নিশিরাতের নির্বাচন। আর ২০২৪ সালে এসে করলেন, আমি আর ডামি। পাকিস্তানের মানুষ ভোটের অধিকার দেয়নি বলেই এদেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। এই অধিকারের জন্যই তো বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছিল। সেই ভোটের অধিকার আপনারা ছিনিয়ে নিলেন।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের দেশের সবকিছু আপনারা ধ্বংস করে দিলেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে মুগুর বাহিনীর হাতে তুলে দিলেন। আমাদের উন্নয়নকে আপনারা লুটেরাদের হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করলেন। দেশকে গড়লেন না, কিন্তু বিদেশের মাটিতে বেগমপাড়া গড়লেন।’
চুয়াডাঙ্গার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা অবহেলিত। চুয়াডাঙ্গার স্বাভাবিক উন্নয়ন হয়নি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মেয়াদ যেহেতু দীর্ঘ নয়। তাদের কাছে দাবি বেশি কিছু নয়। ইনসাফের কারণে আগামী একনেকে চুয়াডাঙ্গাতে কমপক্ষে একটি প্রতিষ্ঠান দেন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে একটি মেডিকেল কলেজ করে দেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ইনসাফের কারণে চুয়াডাঙ্গার ন্যায্য দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী আপামর জনগণকে নিয়ে দেশটাকে গড়তে চায়। ওরা আমাদের জন্য দেশের যে কঙ্কাল রেখে গেছে, আমরা সেই কঙ্কালে গোস্ত ও চামড়া পড়াতে চাই। ওরা উন্নয়নের নামে লুটতরাজের মহারাজ্য কায়েম করেছিল। আমরা মানুষকে ইনসাফভিত্তিক উন্নয়ন উপহার দিতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। এলাকায় এলাকায় কোনো বৈষম্য থাকবে না। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজ হবে দুঃশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত। একটা মানবিক বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।’
কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে আমির অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক মোবরক হোসাইন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ২৪ আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার শহীদ শাহরিয়ার শুভর পিতা আবু সাঈদ মন্ডল।
সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনস্রোত এসে সমবেত হয় টাউন মাঠে। বেলা ১২টার আগেই মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়। সেখানে জুমার নামাজে ইমামতি করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ