বাংলা৭১নিউজ,(গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়ার পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বালুভর্তি বস্তা ফেলছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নদী তীরবর্তী মানুষকে সতর্ক করতে জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারি দফতরে জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর ডান তীরঘেঁষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছরের মতো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে ভয়াবহ বন্যা। তাই বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন জেলার সাত উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের এসব মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করা এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এ উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফুলছড়ি উপজেলার কালিরবাজার সাব-জোনাল অফিসের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনা রোধ করতে ফুলছড়ি উপজেলার কাতলামারী, গজারিয়া, রতনপুর, সিংড়িয়া, গুনভরি, মশামারী, উড়িয়া, কেতকিরহাট, ঘোলদহ, কঞ্চিপাড়াসহ বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের আব্দুল মালেক জানান, ভরতখালী ইউনিয়নের ওয়াবদা বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের পশ্চিমে লক্ষাধিক মানুষ হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা আছে।
সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল জানান, সাঘাটার ভরতখালী-কচুয়াহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে রয়েছে। বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেছি এবং সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। বন্যা কবলিতদের সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত আছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা সমাধানের জন্য জরুরিভাবে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাঘাটার বন্যা কবলিত মানুষদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেআই