নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে অনিয়মে জড়িত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের ধরণ অনুযায়ী চাকরিচ্যুতি হতে পারে বলেও তিনি জানান।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
মো. আলমগীর বলেন, যারা কথা শোনেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পুরো এখতিয়ার রয়েছে। যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় স্বেচ্ছায়- স্ব উদ্যোগে এগুলো করেছে এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল কিন্তু তারা নেয়নি, তাহলে চাকরিচ্যুত থেকে শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইসি দুই মাস পর্যন্ত সাসপেন্ড করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যে শাস্তির সুপারিশ করবো নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করে আমাদের জানাবে। আর বাস্তবায়ন না করলে সে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারি। কার কেমন অপরাধ সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অধিক সংখ্যক কর্মকর্তা একই অপরাধ করলে কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে সংখ্যা বিষয় নয়। বিষয়টি হলো তিনি অপরাধ করেছেন কি না। আমাদের কাছে সব ডকুমেন্ট আছে। সব ভিডিও আছে। কেন করলো সেটা কিন্তু বের করতে হবে। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের আইন ডিজিটাল যুগের সুবিধা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগের কমিশন কী করেছে সেটা নিয়ে বলবো না। আমরা আইসিটির সুবিধাটা নিয়েছি। সিসি টিভির মাধ্যমে আমরা নিজেরাই দেখলাম। এখন তারা স্বেচ্ছায় (অনিয়ম) করেছে, নাকি চাপের মুখে করেছে এটাই দেখার বিষয়। এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে যেহেতু নিজেরাই আমরা অনিয়ম দেখেছি, তার অর্থ বাকিগুলোতেও যে শৃঙ্খলা ছিল তা নয়। অপরাধের মাত্রা দেখে শাস্তির সিদ্ধান্ত হবো।
তিনি বলেন, মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর আস্থাহীনতার কারণেই সিসি ক্যামেরা বিষয় এমন নয়। টিমের সবাই তো খারাপ না। দু’একজন হতে পারে। আমাদের ওপর যেমন তাদের আস্থা আছে, আমাদেরও তাদের ওপর আছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও তো একই ডিসি, একই এসপি, একই ভোটকর্মরত দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কাজেই একটা খারাপ হলে যে আরেকটা খারাপ হবে তা নয়।
অনেক কর্মকর্তা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে লিখিত দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য দেওয়ার একটা ফরম আছে। আমাদের কাছে কিছু পাঠায়নি। কার কাছে কী দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। আইনগতভাবে এটা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে কে দিলো, কাকে দিলো। এরপর আমরা দেখবো। ন্যায় করলে তো সমস্যা নেই, অন্যায় করলে তো সমস্যা হতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ৪২ হাজার কেন্দ্র হবে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ বুথ হবে। ফলে আড়াই লাখ ক্যামেরা ব্যবহার হতে পারে।
নতুন ইভিএম কেনার প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কমিশনার বলেন, প্রজেক্ট পাস করার দায়িত্ব প্ল্যানিং কমিশনের। তারা যদি যথাসময়ে এটি পাস করে তাহলে ব্যবহার করা যাবে কারণ এর সাথে ট্রেনিং জড়িত। যথাসময়ে না আসলে এ মেশিনে কোনো কাজে আসবে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যালট ও ইভিএম দুই ক্ষেত্রেই ডাকাতি আছে। তবে ইভিএমে ভোটার উপস্থিত হতে হবে। তাই উপস্থিত ভোটারের থেকে বাড়তি ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এটাই ইভিএমের বিশেষত্ব।
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নর্বাচনের অনিয়ম তদন্তে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইসি। ওই কমিটি তদন্তের জন্য বর্তমানে গাইবান্ধা অবস্থান করছেন। তারা ভোটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাসহ ৬৮৫ জনের শুনানি করবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ