হাবুল বেপারী ও রাবেয়া বেগম, দুজনে স্বামী-স্ত্রী। সাত বছর আগে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর থেকেই শ্বশুর বাড়ি বসবাস করে আসছিলেন হাবুল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে স্ত্রী রাবেয়ায় প্রতি ক্ষোভ দেখা দেয় তার। মূলত তিনি তার স্ত্রীকে পরকীয়া নিয়ে সন্দেহ করতেন। এছাড়া রাবেয়ার কাছে বিভিন্ন সময় টাকা চেয়ে না পাওয়ায় সেই ক্ষোভ যেন আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাবুল।
এরপর ১১ আগস্ট রাতে রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন তিনি। তখন রাবেয়ার হাত পেছন থেকে চেপে ধরে রেখেছিলেন হাবুলর দুলাভাই সূর্য্য মোল্লা।
এ ঘটনায় সবশেষ হাবুল বেপারীকে সোমবার (১৪ আগস্ট) গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ঢাকার তুরাগ কামারপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুরের সদরপুরে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ১৩ আগস্ট ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় সেফটিক ট্যাংক থেকে রাবেয়ার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে সদরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
র্যাব জানায়, বিগত কয়েক মাস ধরে স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ছিল হাবুলের। মূলত তিনি তার স্ত্রীকে পরকীয়া নিয়ে সন্দেহ করতেন। এছাড়া হাবুলের স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। তিনি ফার্নিচারের দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। ফলে তার উপার্জন ছিল কম। আর রাবেয়া বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, উপার্জন কম থাকায় প্রায়ই হাবুল তার স্ত্রীর কাছে টাকা চাইতেন। কিন্তু রাবেয়া তার উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতেন। এজন্য তিনি তার স্বামীকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতেন। ফলে রাবেয়ার প্রতি পরকীয়ার সন্দেহ আরও বেড়ে যায় হাবুলের।
এছাড়া হাবুলের দুলাভাই সুর্য্য মোল্লা বিভিন্ন সময় রাবেয়ার কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছেন। ধার করা টাকা পরিশোধের জন্য রাবেয়া চাপ প্রয়োগ করলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি এবং ঝগড়া হয়।
র্যাব জানায়, একপর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হাবুল। তিনি পরিকল্পনার বিষয়টি তার দুলাভাই সূর্য্য মোল্লাকে জানান। এদিকে রাবেয়ার প্রতি আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল সূর্য্য মোল্লার। তাকে মেরে ফেললে ধার করা টাকা ফেরত দিতে হবে না- এই চিন্তা করে তিনি হাবুলের কথায় রাজি হন।
র্যাবের মুখপাত্র আরও জানান, ১১ আগস্ট রাতে রাবেয়ার বাড়ি যান সূর্য্য মোল্লা। তারা সেখানে সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খান। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়ে। এসময় হাবুল, সূর্য্য মোল্লা ও রাবেয়া চেয়ারে বসে আলাপচারিতা করছিলেন। একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরেন হাবুল। আর সূর্য্য মোল্লা রাবেয়ার হাত পেছন থেকে চেপে ধরেন। এভাবেই রাবেয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে, এজন্য ভিকটিমের মরদেহ ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকির মধ্যে ফেলে দেয়। আর হাবুলের দুলাভাই রাতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যান। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন সকালে রাবেয়ার মা হাবুলের কাছে মেয়ের বিষয়ে জানতে চান। রাবেয়া এনজিও’র কাজে অফিসে গেছেন বলে জানান হাবুল। তিনি তার শাশুড়িকে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন।
একপর্যায়ে হাবুল তার শাশুড়িকে জানান, জরুরি কাজে তাকে ঢাকা যেতে হবে। এভাবে তিনি কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে তিনি বেশকিছু স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং গচ্ছিত টাকা নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ