পানি নিষ্কাশন খালে প্রভাবশালীদের মাছ চাষে স্বপ্ন ভাঙছে হাজার কৃষকের। এ কারণে আমন ধান ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল ঘরে তুলতে পারেননি তারা। বপন করতে পারেননি রবি শষ্য। এবার রবি মৌসুমে পেঁয়াজ ও সবজি আবাদ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এমন দশা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার হাজার হাজার কৃষকের। পানি নিষ্কাশনের খালে প্রভাবশালীদের বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে তাদের কয়েক হাজার বিঘা জমি এখন পানির তলায় আছে।
নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় এলাকার মওলার বিল পাড়ের গ্রামের বর্গাচাষী ভাদু বিশ্বাস বলেন, আমন মৌসুমে কয়েক বিঘা ধান রোপণ করেছিলেন বিলের জমিতে। তবে সে ধান ঘরে তোলা তো দূরের কথা থাকছে পানিতে ডুবে, পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে পাট, ধানসহ নানা ফসল।
আমিরুলের মতো হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে আছে। গত দুই মৌসুম তারা কোনও ফসল করতে পারেনননি। আসছে রবি মৌসুমে যে বিল ঘিরে সব থেকে বেশি সবজিসহ নানা জাতের ফসলের আবাদ হয় সেই বিলে এখনো কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমর পানি রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের দুঃখ দুর্দাশা। তারা বলেন, বর্ষা যেমনই হোক বিলশুকা খাল ও হিসনা নদী দিয়ে মওলার বিলের পানি বের হয়ে যায়। তবে এলাকার প্রভাবশালীরা বিলশুকা খাল ও হিসনা নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করায় এবার আর মওলার বিলের পানি বের হয়নি। ফলে এবার কৃষকের আমন ধানসহ নানা ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আমিরুল জানান, এবার পরপর দুই বার বড় বর্ষা হয়েছে। তখন পানি নেমে গিয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে। এরপর সর্বশেষ বর্ষার বৃষ্টি হওয়ার পর আর পানি নামছে না।
তারা জানান, মিরপুরের পাহাড়পুরে হিসনা নদীতে প্রভাবশালীরা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এ কারণে পানি নামছে না।
স্থানীয়রা জানান, তিন ইউনিয়নের জমি রয়েছে এ বিলে। সেখানে জমির পরিমাণ অনেক। কয়েক হাজার একর হবে। মূলত রবি মৌসুমে এ বিলে বড় আবাদ হয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাঁজর, টমোটোসহ নানা জাতের সবজি। পাশাপাশি অনেকে বোরো ধানও রোপণ করে থাকেন।
কৃষকরা জানান, এবার পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে নেয়। প্রকৃত কৃষকরা আমনে লোকসান গুনেছেন। কারণ এ বিলের প্রকৃত জমির মালিকরা কেউ কৃষক নয়। তারা সব জমি প্রান্তিক কৃষকদের কাছে বর্গা রেখেছেন।
৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করছেন রহমত আলী নামের একজন কৃষক। গত আমনে কোনও ফসলই ঘরে তুলতে পারেননি তিনি। তার লোকসান হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এবার রবি মৌসুমে সবজি আবাদ করতে না পারলে তার বড় লোকসান হবে তার।
রহমত আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই তারা সংকটে। সর্বশেষ আমনে তারা লোকসান গুনেছেন। পাট ও ধান ঘরে তুলতে পারেননি। এখন শীতকালে সবজি আবাদ করতে না পারলে একেবারে পথে বসে যেতে হবে। কেউ আমাদের বিষয়টি শুনছে না। যেখানেই যাচ্ছি সবাই দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। তাহলে আমাদের কী হবে?
কৃষক ও কিষানিরা জানান, রবি মৌসুমে এ বিলে পেঁয়াজ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা জাতের সবজি আবাদ করা হয়। পানি না নামায় হতাশা তাদের চোখেমুখে। করোনাকালে ফসল ঘরে তুলতে না পারলেও জমির মালিকদের লিজ টাকা দিতে হয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ কৃষকদের।
কৃষকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা শায়খুল ইসলাম।
তিনি জানান, বর্ষায় বিলে পানি জমলেও তা বেরিয়ে যায়। তবে এখন বিলে প্রচুর পানি জমে আছে, যা এ সময় থাকার কথা নয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল মারুফ জানান, সমস্যার বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যার ফোনে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কৃষকরা এসেছিলেন বলেও জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন জানান, বিলের পানি নিষ্কাশনে বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন আরও বলেন, কৃষকরা তাদের অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা করতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এএম