বাংলা৭১নিউজ, চট্টগ্রাম: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজের বাড়তি দাম বহাল থাকলেও দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী।
রমজানের শুরুতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ২২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ১২ থেকে ১৪ টাকায় নেমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পেঁয়াজের এই দাম গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি পেঁয়াজ এনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাড়তি মুনাফার পরিবর্তে এখন লোকসানের আশঙ্কা করছেন খাতুনগঞ্জের পাইকাররা।
খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘যা বেচাকেনা রমজানের আগেই বিক্রি হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা সে সময় যে পণ্য নিয়ে গুদামে রেখেছেন এখন সেগুলোই বিক্রি করেছেন। সে সময় চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছিল। এখন খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ক্রেতা নেই।’
তিনি বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখন পেঁয়াজ এনে ক্ষতির মুখে। বিক্রি না হওয়ায় অলস সময় পার করছেন।
জানা গেছে, প্রতিবছর রমজান ও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের বাজার চড়া হয়ে যায় কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। দেশের বাজারে দুই কারণে এবার পেঁয়াজের দাম চড়েনি। প্রথমত, ভারতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং ভারতের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য (এমইপি) প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে দেশে পেঁয়াজের আমদানিও বেড়ে গেছে।
গত বছর বন্যায় ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারতের বাজারেই পেঁয়াজের দাম রেকর্ড ছুঁয়ে যায়। আর অভ্যন্তরীণ বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রুখতে ও রপ্তানিকারকদের নিরুৎসাহিত করতেই গত ২০১৫ সালের রমজান মাসের শুরুতে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি ২৫০ থেকে ৪৩০ ইউএস ডলার এবং পরে তা আরো বাড়িয়ে ৭০০ ডলার নির্ধারণ করেছিল সে দেশের কাঁচাপণ্যের মূল্য নির্ধারণকারী সংস্থা (ন্যাপেড)।
টনপ্রতি ৭০০ ডলার নির্ধারণের পর খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কেজি ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এর পর থেকে বাজারে পেঁয়াজের ক্রেতা কমতে থাকে, চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারত থেকে আমদানিও কমে যায়। পরে বিকল্প দেশ পাকিস্তান, মিশর, মিয়ানমার ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে বাজার দখল হতে থাকে।
তবে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজে আজার সয়লাব হয়ে গেছে দেশের বাজার।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন ১৫-২০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলেও সে পরিমাণ ক্রেতা না থাকায় গুদামে জমছে। বেশি পেঁয়াজ আসায় বাজার দাম কমে গেছে। গতকাল ভারতীয় সবচেয়ে ভালোমানের পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়। বাজারে নাসিক ও কানপুর দুই ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সহসভাপতি আবসার উদ্দিন বলেন, ‘রমজানে চিনি-ছোলার ব্যবসায়ীরা মুনাফা পাওয়ায় এবার বেশ খুশি হলেও কাঁচাপণ্যের ব্যবসায়ীরা কাঁদছেন। বাজার এতটাই কমেছে অনেকেই পথে বসছেন।’
এদিকে দাম কম থাকায় এবার ভ্রাম্যমাণ আদালতকে পেঁয়াজের বাজারের দিকে একেবারেই নজর দিতে হয়নি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনও ছিল স্বস্তিতে। তবে পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে দাম কমেনি। এখনো আগের দামেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এস