সামরিক আইন জারির ঘটনায় জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। গতকাল শুক্রবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।
আজ শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এমন একসময়ে দেশটির জনগণের কাছে ক্ষমা চাইলেন, যখন ক্ষমতা ছাড়তে তার ওপর চাপ বাড়ছে।
ইউনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গতকাল শুক্রবার দফায় দফায় জরুরি বৈঠক করে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনে আজ শনিবার দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে সামরিক আইন জারির ঘোষণার বিষয়ে ইউন বলেন, “প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেকটা মরিয়া হয়ে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তাদের অসুবিধায় ফেলেছিল। এ জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে সামরিক আইন জারি করার পর এবারই প্রথম বক্তব্য দিলেন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, “আমি এই ঘোষণার কারণে সৃষ্ট আইনি এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার সমস্যা এড়াতে পারব না।”
তিনি বলেন, “মানুষ ভাবছে, আবার সামরিক আইন ঘোষণা করা হবে কিনা! তবে আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, অবশ্যই হবে না। সামরিক আইন ঘোষণা হবে না। দেশকে কীভাবে স্থিতিশীল করা যায়, তার সিদ্ধান্ত আমি আমার দলের ওপর ছেড়ে দেব। এর মধ্যে আমার মেয়াদের বিষয়টিও রয়েছে।”
প্রেসিডেন্ট বলেন, “দেশের ভবিষ্যত পরিচালনার জন্য আমার দল এবং সরকার দায়ী থাকবে। আমি আমার মাথা নত করছি এবং জনগণের উদ্বেগের জন্য আমি আবারও ক্ষমাপ্রার্থী।”
এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়ায় গত ৫০ বছরের মধ্যে গত মঙ্গলবার প্রথম মার্শাল ল বা সামরিক আইন জারি করা হলে তাতে হতবাক হন দেশটির মানুষ।
ইউন সুক ইওল সেদিন রাতে এক টেলিভিশন ঘোষণায় ‘রাষ্ট্র বিরোধী শক্তি’ এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকির কথা উল্লেখ করে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই পরিষ্কার হয়ে যায় যে- কোনো বিদেশি হুমকি নয়, বরং তার নিজের রাজনৈতিক সংকটের কারণেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সেদিন রাতেই প্রেসিডেন্টের সামরিক আইন জারির ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আইনপ্রণেতারা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্ষোভের মুখে সামরিক আইন জারির ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।
সেই থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা চলছে। প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের তৎপরতা শুরু করেছে বিরোধী জোট। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত ইউনের মেয়াদ পূর্ণ হতে আরও দুই বছর বাকি।
স্থানীয় জরিপকারী প্রতিষ্ঠান রিয়েলমিটারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দশজনের মাঝে সাত জনের বেশি দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে। অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। বিরোধী দলের হাতে ১৯২টি আসন রয়েছে।
অর্থাৎ, প্রস্তাব পাস করার জন্য তাদের শাসক দল থেকে মাত্র আটজনের ভোট প্রয়োজন। এমনিতে শাসক দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১০৮ জন। প্রেসিডেন্ট ইওল যদি অভিশংসিত হন, সেক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে বাছাই করতে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আর এই দুই মাস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ