বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানেন না। তবে এ ধরনের কোনো বিষয় জানতে পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নে য়া হবে।
প্রধান বিচারপতি (সোমবার) ঢাকার নিম্ন আদালত পরিদর্শন করতে এসে বার ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।
গত দুই সপ্তাহে অন্তত ১৭ জন নাগরিক কথিত ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডেরি শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছে, টেলিভিশন টক-শো’তে আলোচনা করছে এবং রাজপথে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানেন না- বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে নাগরিক সমাজ বিশ্মিত না হয়ে পারে না।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রীম কোর্টের আইজীবী ব্যারিষ্টার সাদিয়া আরমান রেডিও তেহরানকে বলেন, এরকম অবস্থায় বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। বিচাবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য তিনি পুলিশ বিভাগের প্রধানকে স্যুয়োমটো রুল জারি করতে পারেন।
আজকেও বহুল প্রচারিত একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ তার মতামত জানিয়ে লিখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সন্দেহে অভিযুক্ত কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল। এভাবে মৃত্যু না ঘটিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার করতে পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেত, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ত।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ঘাটন করা ছিল পুলিশের প্রথম ও প্রধান কাজ। কিন্তু এভাবে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রশ্ন ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে।
এ ছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, এভাবে ক্রসফায়ারের ঘটনায় অপরাধের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থা নিয়েও জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে ।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ মামলার আসামিরা এভাবে মারা গেলে অনেক সত্য অপ্রকাশিত থাকবে। হয়তো ফাহিম আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারত।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র আইন হাতে তুলে নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান কোনভাবেই কাজ করছে না। একজন মানুষকে রিমান্ডে নেয়া হলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সেখান থেকে তাকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নেয়া হলো আর ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। এর মাধ্যমে মূলত বিচার প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, আদালত এসব হত্যাকাণ্ডের জবাব চাইতে পারে। জবাব না চাইলে, এই অবস্থা চলতেই থাকবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, “ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমার তো মনে হয় দেশে কারও কোন সন্দেহ নাই যে, পুলিশ তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলছে।“
ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, এ ঘটনাগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত হওয়া দরকার। একটি সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে।
তথ্য: পার্সটুডে
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস