বাংলা৭১নিউজ, এম.নাজিম উদ্দিন,পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর বাউফলে ক্যান্সারে বাম পা হারানো বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাবেকুন নাহার দুলিয়ার (১৫) অর্থের অভাবে চিকিৎসা চলছে না ।
বাবা মাও হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থায়। এযেন অসহ্য যন্ত্রণার এক গভীর আর্তনাদ। চোখের সামনে দিয়ে সহপাঠিরা স্কুলে যায় দেখে অন্ধকারে ডুবতে পরা দুলিয়ার মনও যেন সহপাঠিদের সাথে স্কুলে চলে যায়। মনে পরা স্কুলের কলোরব যেন তাকে দিন দিন আরো গভীর অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে। ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে বড় হওয়ার আশা-ভরসা আর জীবন প্রদীপ।
পা হারানো দুলিয়ার বাবা জানায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিদিনের মত দুলিয়া ক্লাসে গিয়েছিল। সহপাঠীদের সাথে দুষ্টোমি করতে গিয়ে দুলিয়া বেঞ্চের ওপর পড়ে গিয়ে বাম পায়ের হাটুর নীচে সামান্য আঘাত পেয়েছিল। আঘাত তেমন লাগেনি ভেবে সে গুরুত্বও দেয়নি। সামান্য বিষ-ব্যাথার ঔষধ খেয়ে একটু ভালো অনুভবও করেছিল।
কিন্তু কিছুদিন পর আবার ব্যাথা অনুভব করলে তাকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার পায়ের এক্স-রে করে হাড্ডিতে সামন্য ফাটল ধরেছে বলে চিকিৎসকরা পায়ে ব্যান্ডেজ করে বরিশার শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।
পরে তাকে বরিশার শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পায়ে ক্যান্সারের উপস্থিতি টের পান চিকিৎসকরা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তাকে ঢাকার মহাখালীতে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনেস্টিটিউটে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
ওই প্রতিষ্ঠানের সহোযোগি অধ্যাপক ডাঃ শাহ মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের তত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয় দুলিয়ার। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দুলিয়ার বাম পায়ের ওই অংশে ক্যান্সারের জীবানু আছে বলে নিশ্চিত হন এবং ওই জীবানু যাতে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য বাম পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে অপারেশন করে দুলিয়ার বাম পা কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকেই দুলিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। থেমে যায় তার পথ চলা।
দুলিয়ার বাবা দুলাল হাওলাদার বাউফল পৌর শহরের সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা । পেশায় সে দিনমজুর। অভাব অনটনের সংসার। একটি দোচালা টিনের ঘরে মা-বাবা ও দুই ভাই নিয়ে মোটামোটি স্বাভাবিক জীবনযাপনই করছিল দুলিয়া। দুলিয়ার স্বপ্ন লেখাপড়া করে একদিন সে মানুষের মত মানুষ হয়ে চকুুরি করে অসহায় বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে।
পরিবারের পাশাপাশি দেশ ও মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলো ক্যান্সার নামক ঘাতক রোগে । বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দুলিয়া সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও কোথাও থেকে কোন সহায়তা পায়নি এমনকি বাউফলেরও কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা দানশীল কেহ এগিয়ে আসেননি বলে সাংবাদিকদের দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুলিয়ার মা রাহিমা বেগম।
তিনি জানান, মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে নিঃস্ব হয়ে গেছি। পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় অনেকে ভাবছেন অনেক সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ, স্কুল কর্তৃপক্ষ কিংবা অন্য কেউ জিজ্ঞসও করেনি। রাহিমা বেগম জানান, দুলিয়ার চিকিৎসার জন্য এখনো ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। কে দেবে এত টাকা? কোথায় পাবো?
চিকিৎসকরা বলেছেন, দুলিয়ার শরীরের অন্য কোন স্থানে ক্যান্সারের জীবানু যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য মোট ১৩ বার ক্যামোথেরাপি দিতে হবে। প্রতিবার থেরাপির জন্য ২৫ হাজার টাকা দরকার। এরপরে রোডিও থেরাপি ও দুলিয়ার কৃত্রিম পা সংযোগ করতে খরচ হবে প্রায় লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে পারলে দুলিয়া হয়ত পথ চলতে পারবে।
মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া দুলিয়ার বাবা বলেন, আমি একজন দিন মজুর। অভাব অনটনের সংসারে ধারদেনা করে এ যাবত মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালিয়েছি। এখন আর পারছিনা। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার মেয়ের চিকিৎসায় জন্য এখনও ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন।
এ অবস্থায় তিনি আবারো মেয়ের চিকিৎসার খরচের জন্য সমাজের বিত্তশালী ও দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তা কামণা করছেন। যোগাযোগের জন্য দুলিয়ার বাবার মোবাইল নম্বর ০১৭২৮৬৩২১৮৮ দেয়া হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস