বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: ক্যানসার চিকিৎসার সবচেয়ে আধুনিক ব্যবস্থা কেমোথেরাপি মানবদেহে ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিচ্ছে। আরও দ্রুত ও বেশি পরিমাণে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ার জন্য রক্তে নতুন নতুন রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে কেমোথেরাপি। কেমোথেরাপি করানোর পর দুরারোগ্য ক্যানসারের জটিলতা আরও বাড়ছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে।
‘নিওঅ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি ইনডিউসেস ব্রেস্ট ক্যানসার মেটাস্টাসিস থ্রু আ টিএমইএম-মেডিয়েটেড মেকানিজম’- এই শিরোনামে গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’-য়ে।
গবেষণাটি নিয়ে ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা অবশ্য কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত। স্তন ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে, অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধ ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলোতে পৌঁছে কী কী কাজ করছে আর তাদের ফলাফল কী হচ্ছে, সেটাই ছিল গবেষণার মূল বিষয়। শুধু ইঁদুরের ওপরে নয়, গবেষণাটি চালানো হয়েছিল মানুষের ওপরেও।
গবেষকদের মতে, কেমোথেরাপির ওষুধ ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলোতে পৌঁছে ফুলে-ফেঁপে ওঠা কোষগুলোর ‘বাড়তি মেদ’ ঝরিয়ে তাদের প্রাথমিক ভাবে কিছুটা হালকা করে দেয়। কিন্তু সেটা খুবই সাময়িক। মানবদেহের রিপেয়ার মেকানিজমের ফলে ওই ঔষধগুলোই কিছু সময় পর শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, ক্যানসারের কোষগুলো আরও দ্রুত ও বেশি সংখ্যায় শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ছে।
নিউইয়র্কের ইয়েসিভা ইউনিভার্সিটির অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ জর্জ ক্যারিগিয়ান্নিস জানান, শরীরে কোষগুলোর একটি বিশেষ গ্রুপ রয়েছে। যার নাম ‘টিউমার মাইক্রো-এনভায়রনমেন্ট অব মেটাস্টাসিস (টিএমইএম)’। এরাই টিউমার কোষগুলোকে আরও বেশি করে ঢুকতে ও ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে।
ক্যানসার চিকিৎসার অসুবিধার মূল কারণটা লুকিয়ে রয়েছে ক্যানসার কোষের জন্ম, বিকাশ আর তাদের গড়ে ও বেড়ে ওঠার মধ্যে।
ক্যানসার চিকিৎসার মূলত তিনটি উপায় রয়েছে। এক, অস্ত্রোপচার। দুই, রেডিওথেরাপি। তিন, কেমোথেরাপি (যার মধ্যে রয়েছে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের মাধ্যমে টার্গেটেড থেরাপিও)। তিনটির মধ্যে প্রাচীনতম পদ্ধতির নাম অস্ত্রোপচার বা সার্জারি। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ক্যানসার রোগীদের অস্ত্রোপচার ব্যবস্থা চালু হয়। অস্ত্রোপচার করে শরীর থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। বিশ শতকের একেবারে শুরুর দিকে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য শুরু হয় রেডিওথেরাপি। এই পদ্ধতিতে খুব শক্তিশালী বিকিরণ দিয়ে ক্যানসারের কবলে পড়া কোষগুলোকে পুড়িয়ে, নষ্ট করে দেওয়া হয়।
সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির নাম- কেমোথেরাপি। ১৯৪০ সালের দিকে শুরু হয় এই পদ্ধতি। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে গত ৮০ বছরে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই কেমোথেরাপি। তবে কেমোথেরাপিও পুরোপুরি ‘নিশ্ছিদ্র’ নয়, এমনটাই বলছেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা।
কেমোথেরাপির সব ওষুধই যে বিপদ বাড়ায়, এমনটা মনে করছেন না মূল গবেষক ক্যারিগিয়ান্নিসও। তিনি জানিয়েছেন, কেমোথেরাপির একটা বিশেষ ওষুধ (রেবাস্টিনিব)টিএমইএমের কাজে বাধা দিতে পারে। কেমোথেরাপির অন্যান্য ওষুধে রক্তে ক্যানসার ছড়ানোর বিপদটাকে কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে রেবাস্টিনিব।
যদিও ইঁদুরের ক্ষেত্রেও গবেষকরা দেখেছেন, স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে দেওয়া ওষুধগুলো ইঁদুরের শরীরে ক্যানসারে কাবু কোষের সংখ্যা ও তাদের আকার, আয়তন আরও দ্রুত হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস