বাংলা৭১নিউজ,(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধিঃ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাঁকডাক দিয়ে চলছে ঠাকুরগাঁওয়ের পশুরহাটগুলোর কেনাবেচা। পশুর হাটের অবস্থা দেখে মনে হয় করোনা কিছুই না। দেশে করোনা নামে কিছু আছে বলেও মনে হয় না তাদের। স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দূরত্ব সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। সরকারের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ।
এতে পশুর হাটগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের খনিতে পরিণত হয়েছে। আবার ল্যাম্পি স্কিন নামে গবাদি পশুর নতুন একটি ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। এরপরও হাটগুলোতে পশু পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে কেনাবেচা। হাটগুলোতে নেই পশু রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা; নেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পশু চিকিৎসক কিংবা পর্যবেক্ষক টিম। এসব দৃশ্য দেখা গেছে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়খোচাবাড়ি, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ি হাটসহ বিভিন্ন পশুর হাটে।
জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬০ জন। করোনায় মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। জেলায় ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আড়াই হাজার গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২০টির।
ঠাকুরগাঁওয়ের পশুরহাটগুলোর ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গরু বাজারে এনেছেন তারা। মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। কিন্তু নানা কারণে মাস্ক পরা হয় না তাদের। সেই সঙ্গে মানা হয় না স্বাস্থ্যবিধি।
করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা কম হওয়ায় ও গরুর ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসের কারণে দাম কমে গেছে। গত বছরে যে গরু বিক্রি হতো ৪০-৪৫ হাজার টাকায়; সে গরু এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ হাজার টাকায়। তাও আবার ক্রেতার সংখ্যা কম। এতে করে গরু ব্যবসায়ীরা তাদের সংসার কিভাবে চালাবেন তা নিয়ে চরম হতাশাগ্রস্ত।
হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, তারা জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছেন। এমনকি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটরা হাটবাজারগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অনেক ব্যক্তিকে জরিমানা করছেন তারা। এরপরও জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।
সদর উপজেলার ১৭ নম্বর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল মাস্টার বলেন, জনগণ যদি নিজেই সচেতন না হয় তাহলে একজন চেয়ারম্যানের পক্ষে জনগণকে সচেতন করা সম্ভব না।
গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দেয়ায় গরু লালন-পালনকারীরা টাকার অভাবে গরুর চিকিৎসা করাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, এ পর্যন্ত সরকারি কোনো পশু চিকিৎসক তাদেরকে কোনো প্রকার পরামর্শ বা গরুর চিকিৎসা দেননি। তাই তারা সরকারের কাছে গরুর ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেয়ার দাবি জানান। যদি তারা এ নিয়ে সরকারি কোনো সহায়তা পান তাহলে হয়তো গরু লালন-পালন করতে পারবেন বলেও জানান।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলতাফ হোসেন বলেন, কোরবানির ১৫ দিন আগ থেকে গরুর হাটগুলোতে মেডিকেল টিম কাজ করবে। ইতোমধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়ে যাতে উপকৃত হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হবে।
তিনি বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত ভেটেরিনারি সার্জন বা চিকিৎসক না থাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু লালন-পালনকারী কিংবা কৃষকের গরুর চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনার মতো ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসেরও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তারপরও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ও এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন-সি ও ঘা শুকানোর জন্য জিংক জাতীয় খাবার প্রয়োগ করা যাবে। তবে শুরুতেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যাবে না। আক্রান্ত গরুগুলোকে সুস্থ গরুর থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। মশা-মাছি থেকে দূরে রাখতে হবে। কারণ ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসটি মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন আরও বলেন, ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত গরু সুুস্থ হয়ে গেলে মাংস খাওয়া যাবে। আক্রান্ত গরুর মাংস খেলেও সেটি মানব দেহে প্রভাব ফেলবে না। কারণ ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাস ৬০-৬৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাঁচে থাকতে পারে না। আর আমরা রান্না করে খাই প্রায় ১৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল ও মানুষের আয়-রোজগার ঠিক রাখার জন্য হাটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। হাট মানেই জনসমাগম। যতটা সম্ভব সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কোরবানির গরু অনলাইনে কেনাবেচা করা যাবে। কাজেই হাটে জনসমাগম কমাতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসআর