১২৩ বছর ধরে শিকলে বাঁধা আছে একটি গাছ। চারদিক দিয়ে গাছকে বেঁধে রাখা আছে, যাতে সে স্থান ত্যাগ করতে না পারে! গাছ আবার হাঁটতে চলতে পারে না-কি? এ বিষয়টি আমি বা আপনি জানলেও, হয়তো জানতেন না এক ব্রিটিশ অফিসার। তাই তো শিকলে বেঁধে গ্রেফতার করেন গাছকে।
১৮৯৮ সাল থেকে আজও গাছটি তার অপরাধের সাজা ভোগ করছে। তবে কী অপরাধ করেছিলো গাছটি? পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে এই গাছটির অবস্থান। এটি একটি বিশালাকার বটগাছ। উপনিবেশিক আমলে এই গাছটিকে এক ব্রিটিশ অফিসার আটক করেন।
ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ১৮৯৮ সালে তুরখান সীমান্তবর্তী ল্যান্ডি কোটলে ব্রিটিশ অফিসার জেমস স্কুইড গাছটিকে গ্রেফতার করেন। জানা যায়, এক সন্ধ্যায় ব্রিটিশ কর্মকর্তা জেমস মাতাল হয়েছিলেন। তিনি মাতাল অবস্থায় দেখছিলেন গাছটি তার দিকে এগিয়ে আসছে।
গাছটি যতই জেমসের দিকে এগিয়ে আসছিলো, তিনি ততই পিছিয়ে যাচ্ছিলেন। গাছে তাকে মেরে ফেলবে এই ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন জেমস। এরপর তিনি মেস সার্জেন্টকে আদেশ করেন, বিশাল এই বটগাছকে গ্রেফতার কেরতে। এরপরই গাছটিকে শিকলে বাঁধা হয়।
ল্যান্ডি কোটলের খোগিখিল উপজাতির ৬০ বছরের প্রবীণ ইসলাম খান শিনওয়ারি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার দাদা ফতেহ খান শিনওয়ারি আমাকে বলেছিলেন, ব্রিটিশ সেনা অফিসার জেমস একজন নির্মম ব্যক্তি ছিলেন। যিনি ১৮৯৮ সালে এই গাছটিকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন। আজও সেই লোহার বেরি পরে আছে গাছটি।’
শিনওয়ারি আরও বলেন, ‘গাছটি বর্তমানে যে জায়গাটিতে আছে, সিটি তার পৈতৃক সম্পত্তি ছিলো। তবে সেই সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জোর করে তার পরিবারের কাছ থেকে জমিটি নিয়েছিল। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও, গাছটি স্বাধীন হয়নি।’
আজও এই বটগাছের উপরে একটি বোর্ডে লেখা আছে, ‘আমি গ্রেফতার হয়ে আছি’। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ল্যান্ডি কোটাল সেনানিবাসের মাঠে বর্তমানে গাছটি পর্যটক, বিদেশি ও স্থানীয়দের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। শুধু পাকিস্তান নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এই পরাধীন গাছটি দেখতে ভিড় জমায়।
ওই অঞ্চলের সাংবাদিক আবু জার খান আফ্রিদি বলেন, ‘গাছটি আজও উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের নিপীড়নের দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়। কল্পনা করে দেখুন, যদি কোনো ব্রিটিশ অফিসার একটি গাছকেও শৃঙ্খলে আটকে রাখতে পারে; তাহলে সে যুগে স্থানীয়দের সঙ্গে কেমন আচরণ করছিলেন তারা?
সূত্র: হাফ পোস্ট
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ