বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের বিষয়ে সন্দেহ হলে দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের ডাকতে পারে। এখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাবে।
আজ বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯ তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বুধবার বিকেল চারটায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বছরের প্রথম অধিবেশনের শেষ দিনের বৈঠক শুরু হয়। ৩৫ কর্মদিবসের এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ২৩৩ জন সংসদ সদস্য মোট ৬৪ ঘণ্টা নয় মিনিট আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের আমরা প্রশ্রয় দিতে চাই না। দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমার কোনো নেতা বা মন্ত্রী, এমপি কারও বিষয়ে তাদের সন্দেহ হলে তারা ডেকে নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। এখানে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করি না, হস্তক্ষেপ করব না। কারও দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাবে।’
বিএনপির গঠনতন্ত্রের একটি ধারা সংশোধনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের পদে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মানে তারা দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আসামিকে দলের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘যারা গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিকে আশ্রয় দেয়, আর দুর্নীতিবাজকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা জনগণের জন্য কী কাজ করবে?’ পরক্ষণে প্রধানমন্ত্রীই নিজের প্রশ্নের জবাব দেন, তারা লুটপাট করতে পারবে। মানুষ খুন করতে পারবে। দুর্নীতি করতে পারবে, কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা চান দেশে সুস্থ রাজনীতি থাকবে। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে।
খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তাঁর ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন সাজাপ্রাপ্তকে দায়িত্ব দিল, তিনি আবার দেশেও থাকেন না, পলাতক।
সংসদ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে বিএনপিতে কী একজনও ছিল না, যাকে দায়িত্ব দিতে পারে? অবশ্য বোধ হয় খালেদা জিয়া একটা জিনিস বুঝতে পেরেছেন, যাদের দেবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির মামলা আছে। কোনটা স্থগিত, কোনটা জামিনপ্রাপ্ত। দেখছে সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। সবার নামে মামলা। সেটা বোঝে থাকলে আমি বলব ঠিক আছে। এই যদি রাজনৈতিক দলের অবস্থা হয় তাহলে সেই দল দেশকে কী দেবে?’
এ সময় সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সব কাগজ পরীক্ষা করেছে। সব শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে, তারা টাকা পায় কি না। এতটুকু ফাঁক পায় কি না, সে চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো ফাঁক পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছিল। তিনি সেগুলো প্রত্যাহার করতে বলেননি। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকটা মামলার তদন্ত হবে। একটিরও যদি সত্যতা পাওয়া যায় তিনি বিচারের মুখোমুখি হবেন।
খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই অরফানেজটা কোথায়। ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে। সেই টাকা নয়ছয় করেছে। তখনকার আমলে ২ কোটি টাকা টাকায় ধানমন্ডিতে ১০-১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেত। তারা দুই কোটি টাকার লোভ সামলাতে পারল না। সেই এতিমদের সাহায্য না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আমাদের দোষ কোথায়? এটা খুঁজে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ১০ বছর ধরে এই মামলা চলে এসেছে। তারপর শাস্তি হয়েছে। সাজা দিয়েছে তো কোর্ট এখানে সরকারের তো কিছু করার নেই। এই টাকা যদি এতিমদের দিলে দিলে তো এটা হতো না।’
বিচারের রায় নিয়ে বিএনপির কোনো কোন নেতা হুমকি দিচ্ছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চোরকে চোর বলিনি, দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলিও না, চোরকে চোর বলিও না—এটাই শিক্ষা হবে বাংলাদেশে? অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে? তা তো হবে না। আমরা তা চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সংসদে গণতান্ত্রিক চর্চার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস