প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৯ জুন) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে এসে সমাবেশে মিলিত হন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়-বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা প্রথা মানি না মানব না’, ‘মেধা না কোটা-মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়-কোটার কোনো ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার’, ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না আকতার বলেন, বাংলাদেশে কোনো কোটা থাকা উচিত নয়। আমি নারী হয়ে বলছি, আমি কোনো নারী কোটা চাই না। আমরা মেধার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পরিচালনা করতে চাই। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে চাই, মেধাবীদের হাতে দেশটাকে ছেড়ে দিন। মেধার মাধ্যমে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই সুযোগ দিন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে আমরা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জয়ী হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা সংসদে বাতিল করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছে। মেধার ভিত্তিতে দেশ গড়ার স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করেছে। সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার ভঙ্গ করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে সাম্য গড়েছিল তা ভেঙে দিয়েছে।
শিক্ষার্থী আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, এদেশে দীর্ঘদিন ধরে কোটা নামক একটা বৈষম্য চলে আসছিল। এই প্রহসন এদেশের লাখ লাখ ছাত্র সমাজের জন্য হয়ে উঠেছিল অভিশাপ। ২০১৮ সালে আমার ভাইয়েরা রক্ত দিয়ে সেই বৈষম্য থেকে ছাত্র সমাজকে মুক্তি দিয়েছিল। আমাদের ভাইয়েরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে অধিকার আদায় করেছিল।
কিন্তু ছয় বছর পর ২০২৪ সালে এসে হাইকোর্ট তার কলমের খোঁচায় আবার সেই বৈষম্যকে পুনবার্সন করতে চাচ্ছে। আমি ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বলতে চাই, এদেশের ছাত্র সমাজ এই বৈষম্যমূলক রায় কোনোদিনও মেনে নেবে না। অবিলম্বে হাইকোর্টের এ রায় প্রত্যাহার করতে হবে।
৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রকে আল্টিমেটাম দিয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিন সরকার বলেন, কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা প্রয়োজনে রক্ত ঝরার মাধ্যমে শেষ হবে। তবুও এই বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি শিক্ষার্থী সমাজ আদায় করে ছাড়বে।
আমরা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিলের আলটিমেটাম জানাচ্ছি। যদি ৩০ তারিখের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয় তাহলে আমরা লাগাতার আন্দোলন গড়ে তুলবো। দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এক-একটি দূর্গ হিসেবে গড়ে তুলে আন্দোলন চালিয়ে নেওয়া হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশের পর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে তাদের দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি
দিতে যান।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ