কেয়ামত হবে ভয়াবহ। ভয়ংকর এ দিনে মানুষ বিনা কাপড়ে উঠবে। এ দিনের ভয়াবহতা এতবেশি হবে যে- সবাই নিজের হিসাব ও চিন্তায় অস্থির থাকবে। কেউ কারো সহযোগিতা করবে না; এমনকি কার কী হালত বা অবস্থা হবে তা-ও উপলব্দি করতে পারবে না। কেয়ামতে দিন মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাপড় পরাবেন। কেয়ামতের ভয়বাহতা ও কাপড় পরানোর বিষয়টি কোরআন-সুন্নায় সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে-
কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
یَوۡمَ نَطۡوِی السَّمَآءَ کَطَیِّ السِّجِلِّ لِلۡکُتُبِ ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُهٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ
সে দিন আমি আসমানসমূহকে গুটিয়ে নেব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলিল-পত্রাদি। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম; সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করবো। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। আমি তা পালন করবই।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৪)
এ দিনের ভয়াবহতা ও কাপড় পরানোর বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এভাবে ওঠে এসেছে-
১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً (كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيْدُهُ) الآيَةَ وَإِنَّ أَوَّلَ الْخَلاَئِقِ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ
‘নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর করা হবে নগ্ন পা, নগ্ন দেহে ও খতনাবিহীন অবস্থায়। আয়াতে এসেছে- كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيْدُهُ অর্থাৎ যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে আবার সৃষ্টি করব। আর কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহিম আলাহিস সালামকে পোশাক পরানো হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আরশের ডান দিকে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের জন্য একটি কুরসি (চেয়ার) আনা হবে। এরপর তাকে এমন উন্নত পোশাক পরানো হবে; যা মানুষ ঘাড় উঁচু করে দেখবে।’ (বায়হাকি)
কেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে?
ইসলামিক স্কলারগণ এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘তিনিই ছিলেন একমাত্র নবি; যাকে কাফের সম্প্রদায় উলঙ্গ করে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিলেন। তাই আল্লাহ তাআলা এর প্রতিদান হিসেবে কেয়ামতের দিন তাঁকে সর্ব প্রথম কাপড় পরানোর এই মর্যাদায় ভূষিত করবেন। এ বিষয়ে আরও একাধিক মতের মধ্যে এটি সর্বাধিক সঠিক বলে নির্ভরযোগ্য ইসলামিক স্কলার ও আলেমগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলাই বিষয়টি সবচেয়ে ভালো জানেন।
কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা হবে খুব বেশি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি এমনটি বর্ণনা করেছেন-
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন পৃথিবীকে মুষ্টিবদ্ধ করবেন ও আকাশমন্ডলীকে গুটিয়ে নিজের ডান হাতে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ আয়াত তথা কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘যদি জমিন মুষ্টিবদ্ধ থাকে এবং আসমানসমূহ তাঁর ডান হাতে থাকে তাহলে মানুষ কোথায় থাকবে? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘তারা জাহান্নামের পুলের উপর থাকবে।’ (মুসলিম)
৩. অন্য বর্ণনায় হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা সপ্ত আকাশকে তাদের অন্তর্বর্তী সব সৃষ্টবস্তুসহ এবং সপ্ত পৃথিবীকে তাদের অন্তর্বর্তী সব সৃষ্টবস্তুসহ গুটিয়ে একত্রিত করে দেবেন। সবগুলো মিলে আল্লাহ তাআলার কাছে সরিষার একটিদানা পরিমাণ হবে।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কেয়ামতের এসব ভয়বাহতা উপলব্দি করা। সঠিক পথ ও মতের উপর থাকার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামতের ভয়াবহতা উপলব্দি করে দ্বীনের সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। ভয়াবহ এ দিনে আল্লাহর সাহায্য ও উত্তম পোশাক পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি