বাংলা৭১নিউজ, নাজিম বকাউল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারী নীতিমালা অমান্য করে ফসলী জমি এবং আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে এবং জনবসতি আবাসিক এলাকায় ইটভাটা নির্মান নিষিদ্ধ হলেও আইন অমান্য করে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা।
ইটভাটার ধোঁয়ায় ফলজ বৃক্ষ, জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস ও পরিবেশ দুর্ষনের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য মারাত্বক ভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। সবচে বেশী ক্ষতির শিকার হচ্ছে কৃষক ও স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি। প্রভাবশালী এসব ইটভাটার মালিক প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে ইটভাটা চালু রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার সদরপুর উপজেলার শৈলডুবি মজুমদার বাজার এলাকায় একেবারেই কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মেসার্স এস এ এম ব্রিকস’। এ ইটভাটাটির ১শ মিটার দুরে শৈলডুবি বাজার, ৩শ মিটার দুরে পূর্ব শৈলডুবি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভাটার চারপাশে রয়েছে ৪ শতাধিক বাড়ী ঘর।
এছাড়া হাজার হাজার ফলদ গাছ রয়েছে। ইটভাটাটি নির্মানের সময় স্থানীয়রা বাঁধা দিলে পরিবেশ অধিদপ্তর নিষিদ্ধ এলাকা বলে ছাড়পত্র দেয়নি। কিন্তু কিছুদিন পর পরিবেশ অধিদপ্তর ইটভাটা নির্মানের ছাড়পত্র দেয়। ফলে কৃষিজমি দখল করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ইটভাটাটির কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক, স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
সদরপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা এবং কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘আর এএস ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা। এ ইটভাটার কারনে স্থানীয়রা নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছে। একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি অভিযোগকারীরা। বোয়ালমারী উপজেলার ২৮নং ত্রিপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ‘রাজ ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে।
ইটভাটাটির কারনে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্বক ভাবে বিঘিœত হচ্চে। ইটভাটার ধোঁয়ায় গোটা এলাকা আচ্ছন্ন থাকায় স্থানীয়রা বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন। গাছ-গাছালীর পাতা পুড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পড়ে যাচ্ছে। বোয়ালমারীর হাসামদিয়া এলাকায় ‘বর্না ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে কৃষি জমিতে।
ইটভাটাটির একেবারেই কোল ঘেষে রয়েছে হাসামদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, বাজার, একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও কয়েকশ বসত বাড়ী। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটা নির্মানের সকল নীতিমালা অমান্য করেই প্রভাবশালী মহলটি এ ইটভাটাটি গড়ে তুলেছে।
এ ইটভাটার কারনে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার মধ্যে থাকলেও কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে সাবেক এমপি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সাড়া পাননি বলে জানাগেছে। ইটভাটাটির বিষয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়ে ভাটা মালিকের কাছ থেকে নানা ধরনের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি।
ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের ‘উসমান অটো ব্রিকস’ নামের একটি ইটভাটার কারনে গত বছর পিয়াজ দানা চাষীরা মারাত্বক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছিলেন। সারাদেশের মধ্যে সবচে বেশী পিয়াজ বীজের দানা উৎপাদন হয়ে থাকে ফরিদপুরের অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুর ও ভাষানচর এলাকায়।
এ ইটভাটাটির কারনে গত বছর কৃষকেরা পিয়াজ দানা উৎপাদনে মারাত্বক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। ইটভাটার ধোঁয়ায় মাঠের পর মাঠ পিয়াজ দানার খেত পুড়ে যাওয়ায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এবছর একই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে কৃষকেরা পিয়াজ দানা বুনতে সাহস পাচ্ছে না। অনেকেই পিয়াজ দানা আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন। এ ইটভাটারি উচ্ছেদের দাবীতে কৃষকেরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
এ ইটভাটার কারনে গত বছর কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ায় জেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ ইটভাটা সংলগ্ন মাঠ পরিদর্শন করে সাময়িক ভাবে ভাটাটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও ভাটা কতৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করেই সরকারী নীতিমালা অমান্য করে ফসলী জমি দখল করে এবং পরিবেশের ক্ষতি করেই বেশীর ভাগ ইটভাটা গুলো নির্মান করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া জানিয়েছেন, পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন স্থানে ইটভাটা নির্মান করা যাবেনা। যদি কেউ সরকারী নির্দেশ অমান্য করে ইটভাটা নির্মান করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস