মিশরের সভ্যতা প্রাচীনকাল থেকেই নীলনদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নীলনদের তীরেই অবস্থিত। বর্তমানে যে নীলনদ দেখা যায় তার পেছনে রয়েছে এক গল্প।
এক সময় নীলনদের পানি প্রবাহের জন্য এখানে সুন্দরী নারীকে উৎসর্গ করা হতো। ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত নীলনদ প্রতি বছর শুকিয়ে যেত। সে সময় মিশরীয়রা একটি কুসংস্কার মেনে চলত। সেটি ছিল শুকিয়ে যাওয়া নদীতে কোনো সুন্দরী, ষোড়শী ও কুমারী মেয়েকে অলংকার ও সুন্দর পোশাক পরিয়ে নীল নদের শেষ সীমানায় যেখানে ডুবন্ত পানি থাকত সেখানে ভাসিয়ে দেওয়া হতো।
তাদের ধারণা ছিল নীলনদকে এসব উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট করতে হবে। না হলে নীলনদ আর পানিপ্রবাহ করবে না। এই নিষ্ঠুর নারী বলি প্রথা মিশরে যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল।
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) খেলাফতের সময় বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আসার (রাঃ) নেতৃত্বে ইসলাম কায়েমের জন্য ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন মিশর বিজয়ী হলো। তখন তিনি নীলনদের এই নারী বলি দেওয়ার ঘটনায় খুব মর্মাহত হন। মিশরীয় একদল লোক প্রতি বছরের মতো এবারও নারী বলি দেওয়ার অনুমতি আনতে বিখ্যাত সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) কাছে যান।
তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাদের জানান, ইসলাম কখনো এ ধরনের কুসংস্কার সমর্থন করে না। অন্যায়ভাবে কোনো মানুষের জীবন এভাবে জলাঞ্জলি দেওয়া ইসলামে কখনোই বৈধ হবে না। এটি ইসলাম ছাড়াও তিনটি আসমানি ধর্মেই সমর্থন করে না। কোথাও এভাবে নারী বলি দেওয়ার নিয়মের বৈধতা নেই।
সে বছর ঘটনাক্রমে দেখা গেলো, নীলনদে পানি আসেনি। তখন চাষাবাদের সীমাহীন ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এমনকি যাদের পেশা চাষাবাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। আবার অনেকেই ফের নীলনদকে সন্তুষ্ট করতে এক কুমারীকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) তৎক্ষণাত চিন্তিত হয়ে খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) কাছে সমাধান চেয়ে বিশেষ দূত পাঠান।
সব ঘটনা জানতে পেরে খলিফা কুমারী উৎসর্গ করার রীতি বন্ধ করায় খুশি হন এবং সাহাবিকে ধন্যবাদ জানান। মহান আল্লাহ তায়ালার নামে একটি পত্র লেখেন খলিফা হজরত ওমর (রাঃ)। এরপর তিনি দূতের মাধ্যমে মিশরের সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) কাছে পত্রটি পাঠান। পত্রের মধ্যে ছিল ছোট্ট একটি চিরকুট। লেখা ছিল শুকিয়ে যাওয়া নীলনদের মাঝখানে চিরকুটটি রেখে দ্রুত চলে আসতে।
খলিফা হজরত ওমর ফারুকের (রাঃ) নির্দেশ অনুযায়ী, চিরকুটটি সাহাবি হজরত আমর ইবনূল আস (রাঃ) নীলনদের মাঝখানে রেখে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, চিরকুটটি রেখে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নীলনদ পানিতে পূর্ণ হতে শুরু করলো। সেই থেকেই নীলনদের পানি প্রবাহ শুরু হয়ে আজো তা প্রবাহমান।
সেই চিরকুটে খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) কী লিখেছিলেন? সেই চিরকুটটি খলিফা হজরত ওমর ফারুখ (রাঃ) নীল নদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আল্লাহর বান্দা, মুমিনদের আমির খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) পক্ষ থেকে মিশরের নীল নদের প্রতি, ‘তুমি যদি তোমার ইচ্ছায় প্রবাহিত হও। তবে তোমার প্রবাহিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর যদি তোমার জারি হওয়ার, প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে হয় তবে মহান রাব্বুল আল-আমিনের দরবারে মিনতি জানাই। তিনি যেন তোমাকে জারি করে দেন।’
আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রাঃ) সেই চিরকুটের দ্বারা নীলনদের সেই সমস্যা আজীবনের জন্য দূরীভূত হয়। এতে বহু যুবতী নারীর প্রাণ রক্ষা পায়। মিশরবাসী অনেক বড় কুসংস্কারের হাত থেকে চিরজীবনের মতো মুক্ত হয়। এরপর থেকেই মিশরের নীলনদে সারা বছরই পানির প্রবাহ থাকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ