বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
‘পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে ইইউ : রিজওয়ানা হাসান সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ উত্তেজনা রাজধানীতে পঙ্গু হাসপাতালে আগুন পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত পণ্যের শুল্কে পরিবর্তন আনবে না সরকার অংশীজনরা কী চান তার ওপর নির্ভর করবে নির্বাচন কবে হবে ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া ২ লাখ ৩৮ হাজার বেকারের কর্মসংস্থান করবে বেজা খালেদা জিয়াকে বার্তা পাঠিয়ে যা বললেন জিএম কাদের ইসলামী ব্যাংকের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম উদ্বোধন এলএনজি ও চাল আমদানি, ব্যয় ১০২৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা নাঈমুল ইসলাম খান ও তার পরিবারের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বিমসটেক সেক্রেটারি জেনারেলের সাক্ষাৎ প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা কবে নাগাদ সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পাবে জানি না: শিক্ষা উপদেষ্টা ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধান বিচারপতি পুলিশে চাকরি পাচ্ছেন জুলাই বিপ্লবে আহত ১০০ জন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শুনানি মুলতবি সচিবালয়ের গেটে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

কাশিমারি বাঁধের ভাঙনে শ্যামনগরের ৯ গ্রামের মানুষ পানিতে হাবুডুবু

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ২৭ মে, ২০২০
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ,(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ খোলপেটুয়া নদীতে তখন জোয়ার শুরু হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা শুরু হয়। দ্রুত মাটি কেটে তা হাতে হাতে একটি সারিতে স্তূপ করে চলেছে। জোয়ারের আগেই কাজ শেষ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষগুলো একটি রিং বাঁধ (মূল বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আরো খানিকটা জায়গা নিয়ে আংটির মতো করে দেওয়া বাঁধ) দেওয়ার চেষ্টা করছিল। যাতে জোয়ারের পানিতে আর পানি প্রবেশ করতে না পারে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের দাপটে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এখানকার ৯টি গ্রামের মানুষ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই এই এলাকাসহ আশপাশের ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে বাঁধ আটকানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। জোয়ারে আর কাজ করা যাবে না। তাই তাড়াহুড়ো।

আরো কয়েকজন সংবাদকর্মীসহ মাইক্রোবাস, পায়ে হেঁটে এবং ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) যোগে সেখানে গিয়ে পৌঁছুলে মানুষগুলোর এই কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে। ট্রলারের জন্যে অপেক্ষা করার সময় নদীতীরের দোকান ঘরে বসা বৃদ্ধ হারেজ আলী বলেন, এই বাঁধ আটকানো না গেলেতো আমরা সব ডুইবে মরবো। ঝড়ের পর থেকে প্রতি জোয়ারে পানি ওঠে, আর ভাটায় খানিকটা কমে। এলাকার বাড়িগুলোর উঠোন ছাপিয়ে ঘরের মধ্যে পানি জমেছে। কাঠের চৌকি, খাট ইট দিয়ে উঁচু করে তাতে মালামাল মজুদ করে রাখা হয়েছে। মানুষগুলো আছে গুটিশুটি মেরে। রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। আর পানি আটকে থাকায় কাঁচাঘরগুলো ভেঙ্গে, বসে যেতে শুরু করেছে। এ কারণে আশেপাশের ইউনিয়নগুলোর মানুষদেরও জড়ো করে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কাশিমারি ইউনিয়নের ৯টি গ্রাম। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। জোয়ারের পানিতে এখানকার প্রায় সকল এলাকাই পানির তলায়। একতলা পাকাবাড়িগুলোর ছাদে, দোতলা পাকাবাড়ির দোতলায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সবচেয়ে বিপদে আছে প্রায় হাজার পাঁচেক মাটির ভিত্তির উপর টিন বা পাতার ছাউনি দেওয়া বাড়িগুলো। এই বাড়িগুলোর উঠোন ছাপিয়ে ঘরের মধ্যে পানি। আটকে থাকা পানিতে ঘরের ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে, আর বসে-ধসে যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা, খুলনার খালিশপুরের একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানকার মূল সমস্যা বাঁধ ভেঙে যাওয়া। ঘূর্ণিঝড় আইলার সময়েও এখানে বাঁধ ভেঙেছিল। পরে একটি রিং বাঁধ দেওয়া হয়। এবার আম্ফানে সেই রিং বাঁধ ভেঙে প্রতি জোয়ারে পানি প্রবেশ করে গ্রামগুলো তলিয়ে দিচ্ছে। দিনের ২৪ ঘণ্টায় দুই বারের জোয়ারেই পানি প্রবেশ করে। বাঁধ রক্ষা করতে না পারলে এখানকার গ্রামগুলোয় মানুষ টিকতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দেশের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের উপজেলা শ্যামনগর। এর দক্ষিণে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। শ্যামনগর উপজেলার একটি ইউনিয়ন কাশিমারি। এই ইউনিয়নের গ্রামগুলো হচ্ছে কাশিমারি, ঝাপালি, জয়নগর, ঘোলা, গোবিন্দপুর, শঙ্করকাঠি, খাজুরাটি, খুটিকাটা ও গাঙমারি। এই গ্রামগুলোতে এখন জোয়ারের পানিতে থৈ থৈ করছে। রিং বাঁধটি আটকানোর কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কাশিমারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মো. আব্দুর রউফ। বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি একাধিক সাংবাদিকদের বলেন, এই ভাঙন আটকানো না গেলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ অশেষ দুর্গতির মধ্যে পড়বে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেই পুরনো কথাই বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই। স্থায়ীভাবে বাঁধ দিতে হবে। তা না হলে জনপদ থাকবে না। উন্নয়ন ভেসে যাবে। তিনি তার চেয়ারমনের মেয়াদকালে কয়েক শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো উন্নয়নের যেসব কাজ হয়েছিল, তাতো সবই ভেসে গেছে। কি হবে এত এত উন্নয়ন কাজ করে। উন্নয়ন টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে আগে শক্ত ও মজবুত বাঁধ দিতে হবে।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও এলাকার এই নদী-বাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে স্থানীয় মানুষের কোনো ভূমিকা আছে কি-না, জানতে চাইলে সাবেক অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী আশেক-ই-এলাহী বলেন, যথেচ্ছ কাঁটাছেড়ায়ও বাঁধগুলো দুর্বল হয়েছে। এখন স্বাভাবিক জোয়ারের ধাক্কাও বাঁধগুলো সইতে পারে না। ১৯৮০ এর দশকে নোনা পানি প্রবেশ করিয়ে বাগদা চিংড়ি চাষ শুর হলেই প্রধানত ব্যাপকভাবে বাঁধ কাটা হয়েছে। যা চলেছে প্রায় তিন দশক, ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলা পর্যন্ত। আইলার পর বাঁধ সরাসরি কাঁটা না হলেও এখানকার চিংড়ি চাষ অব্যাহত রাখতে পাইপ দিয়ে বাঁধের উপরিভাগ দিয়ে পানি টেনে আনা হয়। বলাই বাহুল্য, এই অঞ্চলের প্রধান ফসল এখনও চিংড়ি চাষ।

ঘূর্ণিঝড় আইলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্যামনগরের এক সমাবেশে যথেচ্ছভাবে বাঁধ না কাটার আহ্বান জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাফা কামালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন, সেটাই আদর্শ। বাঁধ কেটে যথেচ্ছভাবে পানি তুললে বাঁধ দুর্বল হয়। তবে চিংড়ি এখানকার প্রধান ফসল। আবার দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য। তবে তিনি দাবি করেন, এখন বাঁধ কাটা হয় না, পানি তোলা হয় পরিকল্পিতভাবে।

বাংলা৭১নিউজ/পিআর

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com