বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বা নিজের সাজা ঠেকাতে জামায়াত নেতা মীর আসেম আলী বিদেশি লবিংয়ের পেছনেই বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে সরকার। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে নথিপত্রও উপস্থাপন করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
সরকারের যোগাড় করা তথ্য অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন মীর কাসেম আলী। ওয়াশিংটনভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানের নাম ক্যাসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। ওই প্রতিষ্ঠানের একটি মেমোও হাতে পেয়েছে সরকার। এতে বলা হয়, তারা ‘পেশাগত সেবার’ জন্য মীর কাসেমের পাঠানো আড়াই কোটি ডলার হাতে পেয়েছে।
২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেম আলীকে দুটি অভিযোগে ফাঁসি ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৮ মার্চ জসিমউদ্দিনকে হত্যা ও ছয় অভিযোগে মোট ৬২ বছরের কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। ওই ৬ জুন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ আবেদন করেন জামায়াত নেতা। শুনানি শেষে সেই আবেদনও খারিজ করে আজ মঙ্গলবার রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।
রিভিউয়ের শুনানিতেও মীর কাসেম আলীর এই বিপুল পরিমাণ বিত্তের প্রসঙ্গ উঠে আসে। অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও আদালতের কাছে মীর কাসেম আলীর লবিস্ট নিয়োগ এবং ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচের বিষয়টি তুলে ধরেন। আর শুনানি শেষে রায়ের আগের দিন অ্যাটর্নি জেনারেল এই রায় নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান।
এই উদ্বেগ কেবল মাহবুবে আলম নয়, ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুরিন আফরোজেরও। তবে রিভিউয়ের রায় ঘোষণার পর সে উদ্বেগ কেটে যায়।
এই রায় নিয়ে কেন উদ্বিগ্ন ছিলেন সে কারণও ব্যাখ্যা করেন তুরিফ আফরোজ। বলেন, ‘কাসেম আলী বিপুল সম্পদের মালিক। তাকে বলা হয় জামায়াতের খাজাঞ্জি। দেশে বিদেশে কোটি কোটি ডলার ইনভেস্ট করা হয়েছে এই বিচার বন্ধ করার জন্য, বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য, ফাঁসি ঠেকানোর জন্য। সুতরাং আমরা এই মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন তো ছিলামই।’
কাসেম আলীর রিভিউ নাচক করার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, তার রিভিউয়ে অনেক বেশি সময় নেয়া হয়েছিল। আবার তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের অভিযোগ ছিল। এ জন্য আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। এখন আমরা অপেক্ষা করছি রায় কার্যকরের।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাসির দাঁবিতে আন্দোলন করে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘ন্যায্যতার কাছে অর্থবিত্তের পরাজয় হলো’।
এর আগে গত ৬ জুন মীর কাসেম আলীর ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘টাকা থাকলেই যে আইনের হাত থেকে বা বিচারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না, অন্তত মীর কাসেম আলীর বিচারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়।’
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস