ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার তেল রপ্তানি নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তাতে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ছে জ্বালানির দাম। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিলো রুশদের প্রতিবেশী কাজাখস্তান। সম্প্রতি ঝড়ের কারণে বার্থ (জাহাজ ভেড়ানোর জায়গা) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। এতে বৈশ্বিক তেল রপ্তানি এক শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
রাশিয়া-কাজাখস্তানের কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়ামের (সিপিসি) বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম তেলের পাইপলাইন। এটি দিয়ে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল বা বৈশ্বিক চাহিদার প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ তেল সরবরাহ হয়। কিন্তু সম্প্রতি শক্তিশালী ঝড়ে এই পাইপলাইনের তিনটি বার্থের একটি পুরোপুরি বার্থ ধ্বংস হয়ে গেছে।
সিপিসির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ) জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগরের রাশিয়া অংশে ঝড়ের কারণে সিপিসির লোডিং সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো দিয়ে জাহাজে করে কাজাখস্তানের তেল বিশ্ববাজারে পাঠানো হতো।
কাজাখ উপ-জ্বালানিমন্ত্রী পাবেল সরোকিন জানিয়েছেন, পাইপলাইনের আরও একটি বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বার্থগুলো মেরামত করতে দুই মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে, যার ফলে দৈনিক তেল রপ্তানি ১০ লাখ ব্যারেল বা বৈশ্বিক চাহিদার এক শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকেই আলোচনায় রয়েছে এই কাস্পিয়ান পাইপলাইন কনসোর্টিয়াম বা সিপিসি। যুক্তরাষ্ট্র রুশ তেলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও বলেছে, রাশিয়ার মধ্য দিয়ে কাজাখস্তানের তেল রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। রুশ জ্বালানিতে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এরপর কিছুটা কমলেও কয়েকদিন ধরে তা আবারও ঊর্ধ্বমুখী।
বুধবার (২৩ মার্চ) এই প্রতিবেদন লেখার সময় অয়েল প্রাইস ডটকমের তথ্য বলছে, এদিন অপরিশোধিত তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্টের দাম ৩ দশমিক ১৯ ডলার বেড়ে ১১৮ দশমিক ৭ ডলারে পৌঁছেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ২ দশমিক ৭১ ডলার বেড়ে হয়েছে প্রতি ব্যারেল ১১২ ডলার। বেড়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং হিটিং অয়েলের দামও।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাশিয়া তার জ্বালানিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ইউক্রেন ইস্যুতে তারা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা পশ্চিমাদের।
তবে অন্য দেশগুলোকে রুশ জ্বালানি আমদানিতে বড় ছাড় দিচ্ছে মস্কো। এরই মধ্যে ভারত সেই সুযোগ গ্রহণ করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমা ভীতির তোয়াক্কা না করে আরও অনেক দেশই একই পথ অনুসরণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ