বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক:
সন্ত্রাসী হামলার পর শোকের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন টেরিজা মে ও জেরমি করবিন।
শেষ মুহুর্তে প্রচারে কনজারভেটিভ ও লেবার দলের এ দুই শীর্ষ নেতা ব্রেক্সিট, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা, মানবাধিকার আইনসহ মূল দাবিগুলোকেই প্রচারের আলোতে আনেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যজুড়ে ভোটগ্রহণের আগের দিন মে বলছেন, তিনিই একমাত্র প্রার্থী যিনি ‘ব্রিটেনের জন্য কিছু করতে পারেন’ এবং সঠিক ব্রেক্সিট চুক্তি তার পক্ষেই আনা সম্ভব।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্যে চাকরির পরিমাণ বাড়বে; বাড়বে বাড়িঘর, আরও উন্নত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অন্যদিকে আরও পাঁচ বছর ‘টোরি কৃচ্ছতার’ বিষয়ে সতর্ক করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লেবার নেতা করবিন।
কনজারভেটিভদের নীতিতে জাতীয় স্বাস্থ্য খাত, সামাজিক নিরাপত্তাসহ পুলিশের সংখ্যা এবং পেনশনের পরিমাণ কমে যাবে বলে নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে লেবাররা।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে বলছেন, নির্বাচিত হলে তিনি সন্ত্রাসী হামলা মোকাবেলায় প্রয়োজনে যুক্তরাজ্যের এখনকার মানবাধিকার আইনের সংস্কার করবেন।
লড়াইয়ে থাকা আসনগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে লিবারেল ডেমোক্রেট। গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রচার চালানো ইউকেআইপি বলছে, শুধু তারাই পারে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এই প্রক্রিয়া কক্ষচ্যুৎ হওয়া ঠেকাতে।
স্কটল্যান্ডে এসএনপি নেতা নিকোলা স্টুর্জেন ওয়েস্টমিনস্টারে স্কটিশদের ‘উচ্চ কণ্ঠ’ ধরে রাখতে তার দলের এমপি পুনর্নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি টেরিজা মে’র নিরঙ্কুশ ক্ষমতা লাভ ঠেকাতে কনজারভেটিভদের প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ম্যানচেস্টার ও লন্ডন ব্রিজ এলাকায় দুই দফা সন্ত্রাসী হামলার কারণে নির্বাচনী প্রচারে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি।
শেষ দিনে কনজারভেটিভ শীর্ষ নেতা মে প্রচার শুরু করেন লন্ডন থেকে, স্মিথফিল্ড মাংসের বাজারে কসাইদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্বামী ফিলিপকে সঙ্গী করে পরে সাউদাম্পটন ও নরউউচে প্রচার চালান মে।
পুরো প্রচারজুড়েই মে বলেছেন ব্রেক্সিটের কথা, যা নিশ্চিত করতেই ৫০ দিন আগে হঠাৎ করেই আগাম নির্বাচনের ডাক দেন তিনি।
মে’র দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পেছনে আগে যুক্তরাজ্যের যে ব্যয় হত, তা বেঁচে যাওয়ায় ‘বিশাল উপকার’ হবে।
তিনি কনজারভেটিভদের প্রতিশ্রুত ২৩ বিলিয়ন পাউন্ডের ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি ফান্ডের ব্যাপারে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন; বলেন এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাড়িঘর, রাস্তা, রেল ও ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের উন্নতি হবে।
মে বলেন, বছরখানেক আগে ব্রিটেনের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে গিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছিল।
“আমার পরিকল্পনা হচ্ছে সেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে নিশ্চিত করা, যেন তা যুক্তরাজ্যের চরদিকে পৌঁছে যায়; ব্রেক্সিটের সুযোগ আমাদের দেবে আরও বেশি চাকরি, আরও বাড়িঘর, ভালো সড়ক ও রেল যোগাযোগ এবং বিশ্বমানের ডিজিটাল যোগাযোগ, যেখানেই আপনি থাকুন না কেন।”
নরউইচে বক্তব্যে মে বলেন, লেবার সরকার গঠিত হলে দেশের ‘অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে’, অপরদিকে তিনি দেশকে আরও উন্নত করতে চান, যেখানে কোনো সম্প্রদায় পিছনে পড়ে থাকবে না।
ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে শেষ দিনের প্রচারের সমাপ্তি টানবেন টেরিজা মে। তিনি বলেন, পক্ষকালের কম সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিটের জন্য ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে এবং ভোটারদের কাছে এই প্রশ্ন থাকছে, ব্রিটেনের জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তি আনতে তারা কর উপর আস্থা রাখছেন।
অন্যদিকে লেবার পার্টির শীর্ষ নেতা করবিন জোর দিচ্ছেন সরকারি সেবা খাতে কয়েক বিলিয়ন বিনিয়োগের দলীয় পরিকল্পনার উপর।
‘গুটিকয়ের জন্য নয়, অনেকের জন্য’ স্লোগান নিয়ে ভোটের মাঠে থাকা লেবার নেতা ব্যবসায়ী ও বেশি আয়ের মানুষের ওপর উচ্চ হারে করারোপ করে এই অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা বলছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় স্বাস্থ্য খাত আরও পাঁচ বছর অর্থসঙ্কট, কর্মচারী সঙ্কট ও বেসরকারীকরণের মধ্য দিয়ে যেতে পারে না।
গ্লাসগোতে শেষ দিনের প্রচার শুরু করা করবিন বলেন, কনজারভেটিভরা বলছে নির্বাচনের পর তারা শক্তিশালী ও স্থায়ী সরকার উপহার দেবেন।
“তারা কী বলছে, এখন তাহলে তাদের কী অবস্থা? কী বলছে তারা? তারা ভাবছে ৮ তারিখের নির্বাচনের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আপনাদের বলছি, তারা আমাদের অবমূল্যায়ন করছে, তাই নয় কি?”
শেষ মুহূর্তের প্রচারে লিবারেল ডেমোক্রেটদের শীর্ষ নেতা টিম ফেরন প্রধানমন্ত্রী মে’কে ‘খোলা চেক’ না দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যেসব আসনে তার দল এবং কনজারভেটিভদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সেখানে লেবার সমর্থকদের ভোটও ‘ধার’ চেয়েছেন তিনি।
ফেরন বলেছেন, সামাজিক সংস্কার খাতে কনজারভেটিভদের ‘হৃদয়হীন’ ও ‘অসহ্য’ অবস্থান বদলাতে লেবার সমর্থকদের প্রতি তার এই আহ্বান।
শেষ নির্বাচনী র্যা লিতে গ্রিন পার্টি যুক্তরাজ্যের জনগণকে ‘হৃদয় দিয়ে বিবেচনা করে’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
“সমগ্র যুক্তরাজ্যের জনগণকে আমি কেবল মাত্র সাংসদদের দেখে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন কেমন দেশ চায় তা বিবেচনা করে ভোট দেন”, বলেন গ্রিন পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা জনাথন বার্টলে।
নির্বাচনে বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৪ বাঙালি প্রার্থী। যার মধ্যে আছেন গত নির্বাচনে লেবারের টিকেটে নির্বাচিত রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস