পৌষের শীতের তীব্রতায় কাঁপছে ভূরুঙ্গামারীর মানুষ। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। তাই ঋতুচক্রে শীতের শুরুতেই গত সাত দিন ধরে ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের শিশু, বৃদ্ধসহ শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষজন।
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিসের সূত্র মতে, দিন যতই গড়াবে শীতের তীব্রতাও ততই বাড়বে।
শীতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও চাহিদার তুলনায় কম। তাই নিম্নমধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ ভিড় করছে কম দামি কাপড়ের দোকানগুলোতে।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে সময়ের হেরফেরে যানবাহন চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। পৌষের সকালে ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। কয়েক দিন ধরে ভূরুঙ্গামারীর আকাশ কুয়াশায় ঘেরা থাকে সারা দিন। দুপুরের আগে দেখা মেলে না সূর্যের। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণে কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। হাট-বাজারে মানুষজন কম। বেচা-কেনা কম থাকায় দোকানিরাও দ্রুত বাসায় ফিরে যান।
দেখা গেছে, শেষ বিকেলে জনশূন্য হয়ে যায় রাস্তাঘাট। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্বের সঙ্গে নির্জনতা বাড়তে থাকে চারপাশে। রাতের আঁধারে কানে আসে বৃষ্টির মতো গাছের পাতা ও টিনের চালায় টুপ টুপ ঝরে পড়া শিশিরের শব্দ।
কম তাপমাত্রার আবহাওয়ার সঙ্গে হিমালয়ের হিমেল হাওয়া মিশে বাড়িয়েছে ঠাণ্ডা। পৌষের শীতে টন টন করছে মানুষের হাত-পা। একটু উষ্ণতার খোঁজে কেউ জ্বালিয়েছে আগুনের কুণ্ডলী। কেউ শরীরে বাড়তি কাপড় জড়িয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বাড়তি কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় কষ্টে দিনাতিপাত করছে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না শ্রমিকরা। গবাদি পশু ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শীতের তীব্রতা নিবারণে সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে এ অঞ্চলের ছিন্নমূল মানুষকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে হচ্ছে।
উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের দুলাল, লাইলি, জাহাঙ্গীর ও আম্বিয়া বেগম বলেন, আমরা সোনাহাট স্থলবন্দরে কাজ করি। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে বন্দরে পৌঁছতে হয়। ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে কাজে যোগ দিতে কষ্ট হচ্ছে।
চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের অটোরিকশাচালক ইসমাইল ও বেলাল বলেন, কুয়াশার কারণে সড়কে অটো চালাতে সমস্যা হচ্ছে। সকালবেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় যাত্রীও কমে গেছে। কুয়াশা যত বাড়ে আয় তত কমে যায়।
কনকনে শীতে ও ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষি শ্রমিকরা। এ অবস্থায় ঠাণ্ডায় শ্রমিকরা ঠিকমতো মাঠে কাজ করতে পারছেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউনিয়নের কামাত আঙ্গারিয়া গ্রামের কৃষক শ্রমিক শাহেব আলী বলেন, এত ঠাণ্ডায় মানুষ তো বিছানা থেকে ওঠেনি, আর আমরা কাজের জন্য মাঠে যাচ্ছি। এই ঠাণ্ডায় কাজ করতে একদমে মন চায় না। একই এলাকার শরিফা বলেন, কয়েক দিন থেকে খুবই ঠাণ্ডা পড়ছে। ঠাণ্ডায় বের হওয়া যাচ্ছে না। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুর আলম বলেন, উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে পাঁচ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ইতিমধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা তুহিন মিয়া (চলতি দায়িত্ব) বলেন, ৩১ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ