বাংলা৭১নিউজ,(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে অবাধে নদী পথে আসছে ভারতীয় গরু। এসব ভারতীয় গরু কুড়িগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। ভারতীয় গরুর চাপে দেশি গরুর খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভারতীয় গরু হাটে বিক্রি বন্ধে কঠোর নজরদারির দাবি করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।
এরই মধ্যে কোরবানি ঈদ উপলক্ষে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গরু পাচারকারি একটি সিন্ডিকেট চক্র। করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে এমনিতেই দীর্ঘদিন কর্মহীন ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষ। এরপর আসে বন্যা। সবকিছু মাথায় নিয়ে গবাদি পশু বেচে যখন এসব অসহায় মানুষ একটু বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে তখনই সব আশায় পানি ঢাললো ভারতীয় গরু।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুরে ভারতীয় গরু আর মহিষের ভিড়ে দেশি গরুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন দিয়ে অবাধে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ। এছাড়াও উলিুপরের সাহেবের আলগা নদী দিয়ে ছোট-বড় গরু ও মহিষ প্রবেশ করে রৌমারী উপজেলার হাটে বিক্রি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদ দিয়ে দিনে কিংবা রাতে গরু ও মহিষের পা বেঁধে কলা গাছের ভেলার সঙ্গে অমানবিকভাবে স্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের পর এসব গরু-মহিষ ডাঙালু এবং রাখাল দিয়ে স্থলে তুলে নিয়ে হাটে তোলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সোর্স জানান, ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি জেলার কালাইর চর, বেরভাংগি এবং হাটশিংমারী জেলার শুকচর সীমান্তের নদী পথ দিয়ে শত শত গরু-মহিষ স্রোতে ভাসিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। আর বাংলাদেশে নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের আইরমারী চর এবং কচাকাটা ইউনিয়নের শৌলমারী চর এবং উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ডিগ্রির চর দিয়ে নদীতে ধরা হয় এসব গরু-মহিষ। লাইনম্যানরা ছোট গরু প্রতি ৫০০ এবং বড় গরু প্রতি এক হাজার টাকা করে নেন। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতার দিয়ে পার করতে ডাঙ্গালুরা গরু প্রতি ২-৩ হাজার টাকা নেন। আর বাংলাদেশে প্রবেশের পর এসব গরু-মহিষ হাট পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতিটির জন্য ৩শ টাকা করে নেয় রাখালরা।
আবার হাট ইজারাদারদের গরু-মহিষ প্রতি ৩৫০ টাকা দিয়ে অবাধে হাটে বিক্রি করা হচ্ছে। অবৈধ এসব গরুর কোনো করিডোর কিংবা অনুমোদিত বিট খাটাল না থাকলেও গরু-মহিষ প্রতি ১৫০ টাকা করে বিট আদায় করে লাভবান হচ্ছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় হাটে ভারতীয় গরু-মহিষ অবাধে বিক্রি হলেও কোনো পদক্ষেপ নেই। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশীয় খামারিরা।
অসুস্থ রোগাক্রান্ত এসব গরু হাটে অবাধে বিক্রি হলেও গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই কোনো ব্যবস্থা। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় দেশি গরুর খামারিরা। আর এসব গরু-মহিষ অবাধে ট্রাকযোগে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
যাত্রাপুর হাটের গরু বিক্রেতা ফজলু মিয়া বলেন, ভারতীয় গরুর জন্য আমরা দেশি গরু বিক্রি করতে পারছি না। গরুর খাদ্যের দাম বেশি। গরু লালন-পালনে ফিড-ভূষির দামও বেশি। এতে আমার বহু টাকা লোকসান হচ্ছে।
একই অভিযোগ করে দেশি গরু বিক্রেতা আমিনুর বলেন, ভাই মাঝে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ ছিল। গরু আসা বন্ধ দেখে খুশি হয়েছিলাম। সেজন্য গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করি। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে অবাধে আসছে এসব গরু। এখন হাটে আমার গরু বিক্রি হচ্ছে না। যা খরচ করেছি পুরাটাই ক্ষতি। অবৈধভাবে গরু আসা বন্ধ করতে সরকার কোনো ব্যবস্থাই নেয় না। এবার করোনা ও বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে ভারতীয় গরু আসায় তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা করিম, জহুর, আলমসহ অনেকে জানান, ভারতীয় গরু রোগাক্রান্ত। এসব রোগাক্রান্ত গরু হাটে বিক্রি হলেও কোনো মেডিকেল টিম দেখা যায় না। ভারতীয় অনেক গরু খুরা, এলার্জি, লেজ-পা ভাঙাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এসব রোগাক্রান্ত গরু খাওয়াও ক্ষতিকর। এসব ভারতীয় গরুর চাপে দেশীয় খামারিরা অনেকেই গরু ব্যবসা বন্ধ করেছেন। বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন চাইলে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ করতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, দেশীয় খামারি ও গরু ব্যবসায়ীদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সীমান্ত পথে ভারতীয় গরু পাচার রোধে প্রশাসন কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও কোনো অনিয়ম হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে