বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা:দেশে প্রতিদিন বাড়ছে কভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত আজ মঙ্গলবার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার স্বজনরা তথ্য গোপন করছেন। এ কারণে এই চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের পরিবারকে নিরাপদ রাখতে তাদের আলাদা থাকার জন্য ১৯টি হোটেলের নাম প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. আমিনুল হাসান স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাব সম্বলিত চিঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
চিঠি অনুযায়ী, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের ২১০টি রুম প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হোটেল অবকাশ, হোটেল জাকারিয়া, হোটেল রেনেসাঁ, ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল, প্যাসিফিক লেক ভিউ অ্যান্ড রিসোর্ট, ল্যা মেরিডিয়ান হোটেলের ১১০ থেকে ১২০টি কক্ষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আর কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হোটেল মেফোলিফ, হোটেল মিলিনার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য গ্র্যান্ড প্রিন্স হোটেল, হোটেল শ্যামলী এবং হোটেল ড্রিমল্যান্ডের ৭০ থেকে ৮০টি রুম প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপরদিকে মহানগর জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রাজমনি ঈঁশা খাঁ, ফারস হোটেল, হোটেল ৭১ এর ৮০ থেকে ১০০ টি কক্ষ রাখা প্রস্তাব করা হয়েছে। এর বাইরে রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হোটেল সাগরীকা, হোটেল গ্র্যান্ড সার্কেল ইন, হোটেল শালিমারের ৬০ থেকে ৭০ টি কক্ষ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ঢাকার অবকাশ হোটেলটি স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যবহার শুরু করেছেন। একই সঙ্গে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিপিসির সব হোটেল-মোটেল।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস জানান, চিকিৎসক, নার্সসহ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যেসব স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োজিত আছেন, তাদের জন্য এরই মধ্যে ঢাকায় পর্যটন করপোরেশনের হোটেল অবকাশ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সময় এসে তারা সেখানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটন করপোরেশনের যতগুলো হোটেল-মোটেল রয়েছে, সবই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধীনে দেশের প্রায় সব পর্যটন এলাকার পাশাপাশি বড় শহরগুলোতে হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারে রয়েছে হোটেল শৈবাল, মোটেল উপল, মোটেল প্রবাল ও হোটেল লাবণী। সিলেটে রয়েছে পর্যটন মোটেল, পর্যটন মোটেল জাফলং, খাগড়াছড়ির পর্যটন মোটেল, কুয়াকাটায় পর্যটন ইয়ুথ ইন ও পর্যটন হলিডে হোমস। এছাড়া দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, রাঙ্গামাটি, গোপালগঞ্জ, টেকনাফ, বেনাপোল, বগুড়া, মোংলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও মেহেরপুরে পর্যটন করপোরেশনের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কভিড-১৯ রোগীদের সংস্পর্শে আসায় স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে। তাদের মাধ্যমে পরিবার বা অন্যরা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই তাদের জন্য পৃথক বাসস্থানের জায়গা করতে বিশ্বের অনেক দেশেই আবাসিক হোটেলকে বেছে নেয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল তাজ হোটেলের দরজা। যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের রাখা হবে বিলাসবহুল তাজমহল প্যালেসে। এছাড়াও তাজ গ্রুপের আরো ছয়টি হোটেল খুলে দেয়া হয়েছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য।
ইউরোপজুড়েও কয়েক ডজন হোটেল এখন স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহার হচ্ছে। মাদ্রিদের প্রায় ৪০টি হোটেলের মালিকরা ভবিষ্যতের কভিড-১৯ রোগীদের জন্য নয় হাজার বেড যুক্ত করার সুযোগ দিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে বেস্ট ওয়েস্টার্ন, ট্রাভেলজ ও হিলটনের মতো ব্র্যান্ডের মালিকরা নিজেদের কিছু হোটেল অস্থায়ী নভেল করোনাভাইরাস ওয়ার্ডে রূপান্তরের বাস্তবতা নিরূপণ করতে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের বৃহৎ আতিথেয়তা সংস্থা অ্যাকর ফ্রান্সে নার্সিং কর্মীসহ নভেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ে যাওয়া সবার জন্য ৪০টি হোটেল উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি