খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ থেকে বাদ পড়ছেন না চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীরাও।
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত এক বছরেও স্থাপন করা হয়নি অক্সিজেন ট্যাংক। তরল অক্সিজেন ইউনিটের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৯ মাস আগে মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আইসিইউতে থাকা ১০টি ভেন্টিলেশনের মধ্যে ছয়টিই অকেজো। এতো কিছুর স্বল্পতা থাকায় করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় করোনার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুইজন। শনাক্ত হয়েছেন ৩৮ জন। তবুও খুলনায় জনগনের মধ্যে সচেতনতার দেখা যাচ্ছে না। অবাধে চলছে সভা সমাবেশ ও লোক সমাগম।
অন্যদিকে শুক্রবার (২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খন্দকার মনিরুজ্জামান (৭০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি খুলনা মহানগরীর খালিশপুর আলমনগর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। ২২ মার্চ আক্রান্ত অবস্থায় তিনি হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় মারা যান আকরাম হোসেন (৭৭)। তিনি বাগেরহাট সদরের শানতলা এলাকার বাসিন্দা আফছার উদ্দীনের ছেলে। ২৯ মার্চ আক্রান্ত হয়ে তিনি খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ নতুন করে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) তারা করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হন। এতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুমেকের আরটিপিসিআর ল্যাব সূত্র জানায়, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে খুলনায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে তিনগুণ।
এদিকে শুক্রবার খুমেক মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের আরটিপিসিআর মেশিনে ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার ছিল ১০৩ জন। যার মধ্যে পজেটিভ হয়েছেন ৩৮ জন।
এছাড়া খুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৪৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন আটজন।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে খুমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আরও জানায়, করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা। কিন্তু সেই সমস্যা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। একই সঙ্গে তরল অক্সিজেন প্লান্টে ৩৬ জনের সেবা প্রদানের কথা বলা হলেও সেখানেও রয়েছে গড়মিল। এ প্লান্টের সক্ষমতা নিয়ে চিকিৎসদের মধ্যেই রয়েছে শঙ্কা।
আইসিইউতে ১০টি ভেন্টিলেশন মেশিন থাকলেও চালু রয়েছে মাত্র চারটি। বাকি ছয়টি কবে নাগাদ সচল হবে তা বলতে পারছে না কেউ।
পাঁচ মাস ধরে অকেজো হয়ে আছে অক্সিজেন উৎপাদনের একটি মেশিন। কবে নাগাদ ঠিক হবে তাও কেউ জানে না।
খুমেকের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমান বলেন, করোনা মোকাবিলায় পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদান করতে হলে সবকিছু একটিভ করতে হবে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেন পোর্ট প্রয়োজন। এসব না হলে করোনা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে।
খুমেকের করোনা ইউনিটের মূখপাত্র ডা. মেহেদী নেওয়াজ খান বলেন, একজন নরমল রোগীর জন্য পাঁচ-আট লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কিন্তু করোনা আক্রান্ত রোগীর জন্য ৮০ লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন। যা দেয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এ টি এম এম মোর্শেদ বলেন, খুমেক হাসপাতাল করোনা রোগী চিকিৎসায় মূল দায়িত্ব পালন করছে। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার সরবরাহ না থাকায় অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে আমাদের জন্য।
বাংলা৭১নিউজ/পিকে