করোনা প্রতিরোধে দেশে বিনামূল্যে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। গত ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকার প্রথম- দ্বিতীয় ডোজ মিলে ১০ কোটি ৬৬টি লাখ ৯৭ হাজার ৭৬ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে পৌনে এক কোটি টিকা।
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) দেওয়া মতে, দেশে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার কম্পানির ২০ কোটি টিকা এসেছে। ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট টিকা পেয়েছে ১২ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। এর মধ্যে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৪৩ হাজার ৭৩৪ জন পেয়েছে প্রথম ডোজ। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৫২ জন। সরকারের হাতে এখন ৮ কোটি টিকা মজুত রয়েছে। আর সংরক্ষণ ও প্রয়োগ ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে নষ্ট হয়েছে ৬৭ লাখ ১ হাজার ২৪১ ডোজ টিকা।
তবে শুধু যে বাংলাদেশেই এমন ঘটনা ঘটেছে তা নয়। পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও টিকা নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বলছে, ‘টিকা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সংরক্ষণ ও পরিবহনসহ নানা কারণে ৫ শতাংশ টিকা নষ্ট হতে পারে। এর চেয়ে বেশি নষ্ট হওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। টিকাদান কর্মসূটি বাস্তবায়নে টিকা নষ্ট হওয়া কমাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ থাকলেও বেশির ভাগ দেশ টিকা নষ্ট হওয়ার হার কমিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
তবে ডব্লিউএইচও’র হিসাব অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কিছুটা কম। দেশে সবচেয়ে কম এসেছে ফাইজার টিকা। এই টিকা নষ্ট হয়েছে ২ হাজার। প্রয়োগ করা হয়েছে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৯৩৯ ডোজ। তাপমাত্রা জটিলতায় মডার্নার টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে মাত্র ৩০টি উপজেলায় ৫৩ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৪ ডোজ। এই টিকা নষ্ট হয়েছে ৮০ হাজার ১০৮ ডোজ।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা ৪৮৩টি উপজেলায় ১ কোটি ৯৬ লাখ ১৪ হাজার ১৭৩ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে এই কম্পানির টিকা নষ্ট হয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ ডোজ। সবচেয়ে কম নষ্ট হয়েছে সিনোফার্ম টিকা। এই টিকা ৪৮৪ উপজেলায় ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭২ ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। এই টিকা নষ্ট হওয়ার পরিমান ২৩ লাখ ৮ হাজার ৩৩১ ডোজ।
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কম থাকাটাকে সাফল্য হিসেবে দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে টিকা নষ্ট হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক। পরিবহন, সংরক্ষণ ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা কাটিয়ে টিকা নষ্ট হওয়ার হার কমিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এমন হতে পারে।
ইপিআইয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন- ‘টিকা পরিমাণে কম আসা, রং পরিবর্তন হওয়া, সংমিশ্রণে সমস্যা দেখা দেয়া, হাত থেকে পড়ে যাওয়া টিকা নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। একটি ভায়েলে যে পরিমাণ টিকা থাকে দেয়ার সময় হয়তো সেই পরিমাণ টিকা পাওয়া যায় না।’
টিকাদান কর্মসূচি শুরুর দিকে ফাইজার টিকা সংরক্ষণে জটিলতা ছিল। সে কারণে টিকা নষ্ট হয়েছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফাইজার টিকা সংরক্ষণে ইউনিসেফের মাধ্যমে ২৫টি ফ্রিজার নেয়া হয়েছে। যে কারণে এখন উপজেলা পর্যায়ে এই টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে।’
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে টিকা নষ্টের হার
করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সব মিলেয়ে ২৪ কোটি ১০ লাখ টিকা নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি টিকা নষ্ট হয়েছে ভারতে। পার্শ্ববর্তী দেশটিতে টিকা নষ্টের এই হার ৬ দশমিক ৩।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ