বাংলা৭১নিউজ,ডেস্ক: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ওষুধ তৈরির ঘোষণা দিতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ কারণে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কপালে চিন্তার ভাজ।
এই পরিস্থিতিতেও আশাজাগানিয়া খবর নিয়ে এসেছে জাপানের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। জাপানের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ইনফ্লুয়েঞ্জার ওষুধ করোনার চিকিৎসায় কার্যকর বলে জানা গেছে। বিশ্বের কনিষ্ঠতম কোভিড-১৯ রোগীও ‘সুস্থ হয়ে উঠছেন’। ইরানে ১০৩ বছর বয়স্ক এক লোক করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর আগে ৯৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এদিকে কিউবাও দাবি করেছে যে, তারা করোনাভাইরাসের ওষুধ তৈরি করে ফেলেছে। এই ওষুধ শিগগিরই অন্যান্য দেশেও রফতানি করার কথা বলছে দেশটি।
অন্যদিকে চীন করোনার চিকিৎসায় নির্মিত শেষ অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারীর রূপ নেয়া নভেল করোনাভাইরাসে যখন দেশ দেশে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, তখন এমন কিছু টুকরো টুকরো ভালো খবর স্বস্তিকরই বটে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর করোনাভাইরাস নিয়ে তুলে ধরেছে কয়েকটি ইতিবাচক খবর হচ্ছে-করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছেন ৮৫ হাজার মানুষ।
করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০ হাজারের বেশি মানুষ। বুধবার পর্যন্ত করোনার উৎপত্তিস্থল হুবেইপ্রদেশে উহান শহরে স্থানীয় কারও আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া ইউরোপের দেশ ইতালিতে একদিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে।
নেদারল্যান্ডসের রটারড্যাম ও উটারশেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করছেন, তারা এমন একটি অ্যান্ডিবডি (জীবাণু প্রতিরোধকারী উপাদান) খুঁজে পেয়েছেন, যা করোনাজনিত কোভিড-১৯ রোগীকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সান এ খবর জানিয়েছে।
ওই গবেষকদের দাবি সত্যি প্রমাণিত হলে করোনার কার্যকর প্রতিষেধক তৈরির পথ আরও সুগম হবে। বাড়িতে বসেই করোনায় আক্রান্ত কিনা, তা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। তাতে অনেক মূল্যবান সময় বেঁচে যাবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ওষুধ আবিষ্কারে চিকিৎসাবিজ্ঞান সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েও যখন অনেকটাই ব্যর্থ, তখন এই রোগের কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবনের দাবি করেছে কিউবা।
ইন্টারফেরন আলফা টু-বি নামের একটি ওষুধ উদ্ভাবন করেছে কিউবার চিকিৎসকরা, যেটিকে করোনাভাইরাস নিরাময়কারী হিসেবে দাবি তাদের। এই ওষুধ সেবনের ফলে ১৫০০ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে দাবি দেশটির।
কিউবার ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়োকিউবা ফার্মা গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘আলফা টু-বি’ ওষুধ প্রয়োগ করে এক হাজার পাঁচশরও বেশি রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন তারা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের নির্বাচিত ৩০টি ওষুধের মধ্যে এটি অন্যতম। এই ওষুধ এখন বিশ্বব্যাপী সরবরাহ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
কিউবায় উদ্ভাবিত ওষুধটি চীনের জিলিনপ্রদেশে অবস্থিত চ্যাংচুন হেবার বায়োলজিক্যাল টেকনোলজিতে উৎপাদন করা হয়। দুদেশের মধ্যে এক চুক্তির অংশ হিসেবে এটি যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে।
এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ জানান, করোনভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মোকাবেলায় ২২টি ওষুধ উদ্ভাবন করেছে কিউবা। এই ওষুধ কয়েক হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ উৎপাদন আরও বাড়ানোর বিষয়ে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলার ওষুধ সরবরাহ করার জন্য অনেক দেশ অনুরোধ করছে। আমরা ওষুধ সরবরাহ করব। কারণ আমাদের প্রয়োজনীয় সামর্থ্য রয়েছে। এতে দেশে ওষুধ সংকটে পড়বে না।
এদিকে ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়পুরে সাবাই মান সিং হাসপাতালের চিকিৎসকরা কোভিড-১৯ রোগাক্রান্তদের ওপর এইচআইভি (এইডস), সোয়াইন ফ্লু ও ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগ করছেন। এতে সফলতা পেয়েছেন বলেও দাবি তাদের।
এ ছাড়া কোভিড-১৯ পরীক্ষার সহজ ও স্বল্পমূল্যের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র। তারা বলছেন, এ পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যাবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এই কিট বাজারে আসছে, যার দাম হবে সর্বোচ্চ ৩৫০ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে আট ঘণ্টার মধ্যে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফল দেয়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অবশ্য ওই প্রযুক্তি নিয়ে আরও কিছুটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।
জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জানিয়েছে, তারা করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের রক্তের প্লাজমা নিয়ে করোনার ওষুধ তৈরি করতে কাজ করছে। আর কানাডার অন্টারিওর গবেষকরা করোনাভাইরাসটির প্রতিরূপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যা ভাইরাসটির শনাক্তকরণ পরীক্ষায় অসামান্য অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরেকটি ইতিবাচক খবর হলো, যুক্তরাজ্যের নথ্য মিডলসেক্স হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত এক নবজাতক সম্পূর্ণ ‘বিপদমুক্ত’ বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর নভেল করোনাভাইরাসের সূতিকাগার চীনের উহান শহরে ঝ্যাং গুয়াংফেন নামের ১০৩ বছর বয়সী এক নারী আক্রান্ত হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বেশ কিছু দিন আগেই।
ভারতের নয়াদিল্লিতে করোনায় আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সেরে উঠেছেন রোগ থেকে।
বাংলাদেশেও প্রথম যে তিন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে দাবি করেছে সরকার।
বার্তা সংস্থা বিএনও নিউজের খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৭৮ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭২২ জনে। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ হাজার ৫৪ জন। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৭৬ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস