♦সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ♦
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। যেহারে সেম্পল টেস্ট হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এরই মধ্যে টেস্টে করোনা আক্রান্তের যে ফলাফল আসছে তা কতটা শঙ্কার এর পরিসংখ্যান দেখলেই বুঝা যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মঙ্গলবারের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় ৪৩৩২ জনের পরীক্ষা হয়েছে এবং এর মধ্যে ৫৪৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত।পরীক্ষার হার যত বাড়বে, করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যাও ততটা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিটা এখন এমন পর্যায়েই রয়েছে।
আর সেকারণেই সরকার লকডাউনের সময় বাড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের ছুটি বাড়বে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অনেকের মতে, বাংলাদেশে করেনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা চূড়ান্ত রূপ নিবে মে/জুন মাসে।অথচ এপ্রিল পার না হতেই সবকিছু শিথিল হয়ে গেছে। গার্মেন্টস মালিকরা একরকম জোর করেই তাদের প্রতিষ্ঠাণ খুলে ফেলেছেন। অর্থ বিত্তের মালিক ছাড়াও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের প্রকাশ্যে ভূমিকা রয়েছে। জাতীয় সংসদের মোট আসনের বৃহৎ অংশও তাদেরই দখলে। মন্ত্রী সভাতেও গার্মেন্টস মালিকদের আধিপত্য উল্লেখযোগ্য। আর মিডিয়া মালিক বনে রয়েছেন বিজিএমইএ’র বেশ কয়েকজন বাঘা বাঘা সদস্য।
অর্থনৈতিক খাত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ন জায়গায় যাদের এতটা অবাধ বিচরণ তাদেরকে সরকার লকডাউনের নামে কয়দিন আটকে রাখবেন। পুরো দেশটাই যেখানে তাদের নিয়ন্ত্রনে কিম্বা তারাই যেখানে সকল সিদ্ধান্তের মালিক, সেখানে তারা যা চাইবেন এবং বলবেন- সেটাইতো হওয়া উচিত। অগত্যা যা কিছু হচ্ছে এবং ঘটছে, তাদেরই হুকুমের ফসল। সরকার যেখানে গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা দিলেন, তার মাত্র ১০টা দিন না যেতেই গার্মেন্টস মালিকরা নির্মম পাষন্ডের মত দেশের সকল জায়গা থেকে শ্রমিকদের ডেকে আনলেন। পরিবহন বন্ধের মধ্যেও শ্রমিকরা কতটা কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে পায়ে হেঁটে, ভ্যানে করে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে হাজির হয়েছেন। এর খোঁজ রাখেননি মালিকরা।
বরং তারা সরকার ও ব্যাংকের সাথে দরবার করেছেন কতটা দ্রুত ঘোষিত প্রণোদনাটা বগলদাবা করতে পারবেন। দ্বিতীয় দফা আরও একবার তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে ডাকা হলো।দলে দলে নারী, শিশু ও পুরুষ ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ছুটে আসলো।আর গত রোববার থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের সব পোষাক কারখানাই খুলে দেওয়া হলো।
অধিকাংশ পোষাক কারখানাই চালু হলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মবর্হিভূতভাবে। আইনের এমন ব্যত্যয় কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। আর অর্থলোভী এসব পোশাক মালিকদের কারণে সেখানে কর্মরত শ্রমিক, তার পরিবার, সাধারণ মানুষ এখন আরও কঠিন ঝুঁকিকে আলিঙ্গণ করে নিল- বাঁচার তাগিদেই।
অনেকেরই প্রশ্ন, গার্মেন্টস মালিকের স্বার্থ রক্ষার জন্য একজন শ্রমিকের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া কতোটা যৌক্তিক কিম্বা ওই শ্রমিক কোন কারণে করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি যে এলাকায় থাকবেন, চলাচল করবেন ওই এলাকাটাই কতটুকু নিরাপদ থাকবে? সেখানকার সাধারণ মানুষের দায় কে নেবেন?
সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস মালিকদের যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে- তাতে উল্লেখ রয়েছে, শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পরিশোধ বাবদ এই প্রণোদনা দেওয়া হলো।এখন পরিস্থিতি এমন দাড়িয়েছে যে, তারা প্রণোদনাও নিচ্ছেন; আবার গার্মেন্টস খোলা রেখে শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনকে ভয়াবহ শঙ্কার মধ্যেও ফেলে দিয়েছেন।
এই যদি হবে তাহলে সরকার কেন পোষাক মালিকদের প্রণোদনা দিতে গেলেন? এই প্রণোদনার সুফল আদতে কারা পাবেন? পোষাক খাতের মালিকরা যাদের শ্রমে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন-এই দু:সময়ে কি তাদের অন্ত:ত একটা মাস বসিয়ে বেতন দেওয়ার সক্ষমতাটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছেন? প্রশ্ন আসে, সারাদেশ লকডাউনে রেখে পোষাক কারখানা চালু থাকলে এই লকডাউনের মানে কি?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা কখনোই পাবনা। কারণ, আমরা সাধারণ মানুষ সব সময়ই গিনিপিগ- সকল র্দূযোগে-দূর্বিপাকে। এটাই আমাদের নিয়তি !
লেখক:
সাবেক সভাপতি
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)
• সংগৃহিত: টাইমলাইন থেকে