মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দেশের শিল্পোন্নয়নে বিটাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে: শিল্পমন্ত্রী উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে: ওবায়দুল কাদের এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৯ বাড়িওয়ালাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা শেরপুরে আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র, ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ দুই ঘণ্টার কোটা আন্দোলনে স্থবির ঢাকা বাংলাদেশ-ইইউর ৩ মি‌লিয়ন ইউরোর ঋণ সহায়তা চু‌ক্তি স্বাক্ষর কুমিল্লা আদালতে মামুনুল হক-খালেদ সাইফুল্লাহ প্রতিমন্ত্রী সিমিনের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ বিকাশ অ্যাপে প্রথমবার বিল পরিশোধে ৯০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট কুপন জরিমানা পরিশোধ করলেই গাড়ির কাগজ পৌঁছে যাবে ডাক বিভাগে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ চীনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার নিয়ে আ স ম রবের পাঁচ দফা একযোগে র‌্যাবের চার ব্যাটালিয়নসহ পাঁচ পরিচালককে বদলি কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন নেই, সমর্থন আছে: ফখরুল চুপিসারে ফেরেশতাদের কথা শুনে যা করতো জিনেরা ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় মামলা, আওয়ামী লীগ নেতা আটক বেনজীরের গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট পরিদর্শনে দুদক টিম সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যানচলাচল বন্ধ পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যা জানা গেলো

করোনাকালে বেপরোয়া গণমাধ্যম মালিক ও সংবাদকর্মীদের অসহায়ত্ব

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ১২ জুন, ২০২০
  • ৯০ বার পড়া হয়েছে
ছবি ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত

সাখাওয়াত হোসেন বাদশাঅল্প কিছুসংখ্যক সহকর্মীকে নিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর একাংশের গত সাতই জুনের কর্মসূচি আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কর্মসূচিটি ছিল আহসানিয়া মিশনের আলোকিত বাংলাদেশ নামক পত্রিকাটিতে কর্মরত সাংবাদিকদের দূরাবস্থা নিয়ে। এই পত্রিকাটিতে নিয়মিত বেতন ভাতাতো নেই, উল্টো কয়েক মাসের বেতন বকেয়া রেখে এখন পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে কিম্বা এর অন্তরালে পুরানোদের বিদায় করে নতুন কাউকে নিয়ে আবার একই প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসার প্লট রচনা করা হয়েছে। যেটাই হোক না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে-সেখানে আমাদের সহকর্মীদের যে অমানবিক অবস্থা, তা নিরসনে বিএফইউজে কর্মসূচি পালন করেছে-এটাই বড় কথা।

ভাবতে অবাক লাগে, করোনাকালীন সময়টাতে গণমাধ্যম মালিকরা কতটা হিংস্র হতে পারে-তা আজ আমরা সবাই অনুধাবন করছি। যেসব গণমাধ্যম মালিকরা সাংবাদিকদের মাথা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে, দেশে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, সরকারি সুবিধা ভোগ করে গড়ে তুলেছে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠাণ, দখল করে নিয়েছে মানুষের জায়গা-জমি, বতসভিটা, লেক, পুকুর-জলাশয় সবকিছু। ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা পর্যন্ত লুটপাট করেছে। ভুয়া সার্কুলেশন দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা লুটে খাচ্ছে। তারাই এখন করোনার অজুহাতে দেখিয়ে সংবাদকর্মীদের ছাঁটাইয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

ভাবটা এমন যে, এই দুই মাসেই গণমাধ্যম মালিকরা সব চিতপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছেন। এই শুয়ে পড়ার ভাবটা প্রায় সব পত্রিকা, টিভি ও অনলাইন পোর্টালেই লক্ষনীয়। ফলে সবাই কম-বেশি সংবাদকর্মীদের ছাঁটাই করছে এবং এই তালিকা ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। এতে করে সাংবাদিকদের পারিবারিক দু:সহ যন্ত্রনাকাতর জীবনের চিত্রটা আরও অনেক বেশি অমানবিক হয়ে উঠেছে। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। একজন সংবাদকর্মী চাকুরি হারালে তার পরিবারটা যে কতটা অসহায় হয়ে পড়ে-তা কেবল ওই ভূক্তভোগি সংবাদকর্মীটিই আঁচ করতে পারেন। এই দূ:সময়টাতে অসহায় সাংবাদিকটির পাশে তার প্রিয় সংগঠন দাঁড়ালে অনন্ত একাকিত্ববোধ এবং মানসিক যন্ত্রনা অনেকটাই প্রশমিত হয়।

এসব বিবেচনায় সম্প্রতি বিএফইউজে’র পালিত ওই কর্মসূচিতে কতজন উপস্থিত ছিলেন এটাকে আমি সংখ্যার বিচারে দেখতে রাজি নই। বরং আমার কাছে এই কর্মসূচির গুরুত্ব, মানবিক দিক এবং সহকর্মীদের চরম দু:সময়ে পাশে দাড়ানোর এই যে নৈতিকদায়িত্ববোধ- এটিকে আমি স্যালুট জানাই।

আবার কষ্ট পাই, যখন দেখি- সাংবাদিকদের এতো সংগঠন; কিন্ত অতিমাত্রার দলাদলি ও ঈর্ষা কাতরতার কারণে করোনাকালীন এই কঠিণ সময়টাতেও পরস্পরবিরোধী অবস্থানে অনড়। এসব সংগঠণগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের মানবিক কর্মসূচিগুলো পর্যন্ত পালন করতে পারছে না। অথচ চলমান এই অস্থির সময়টাতে সাংবাদিকদের জন্য ঐক্যটা আজ অপরিহার্য। এই দাবি অতিতের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি এবং যৌক্তিকও বটে।

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, কোন জোটবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে অতি মহামানব হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র আন্তরিকতা এবং ঐক্য গড়ে তোলার সদিচ্ছাটাই যথেস্ট। ২০১২ সালে বিএফইউজে ও ডিইউজে’র দুই অংশ এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবকে সাথে নিয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) জোটবদ্ধ একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ওই সময় তিনটি অঙ্গিকারের ভিত্তিতে এই জোটবদ্ধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল :
১.সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচার;
২. দেশের যেকোন প্রান্তে সাংবাদিক নির্যাতনের তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ এবং
৩. মুক্ত, স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা।
দীর্ঘ একটি বছর ডিআরইউ এই জোটবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে গেছে। ২০১২ সালের কমিটি দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর কেন এবং কি কারণে এই জোট আর একত্রে পথ চলতে পারেনি তা আমার জানা নেই। অথচ সারাদেশের সাংবাদিকদের চোখে-মুখে তখন দেখেছি ঐক্যের প্রতিচ্ছবি।

সাংবাদিকদের দুই অংশ মিলবে কিনা- এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। তবে সাংবাদিকদের সকল সংগঠন এককাতরে এসে একটা জোটবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলতে সমস্যা কোথায়? এটি আমার বোধগম্য নয়। একথাতো ঠিক যে, সংবাদকর্মীদের বিষয় নিয়ে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সংগঠণগুলোর সাথে বসছেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত করে আনাও হচ্ছে। গণমাধ্যমের অভিভাবক হিসাবে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের অনুষ্ঠাণে আসবেন এটিই স্বাভাবিক।

কিন্ত কষ্ট পাই, যখন দেখি তথ্যমন্ত্রী যতটানা সাংবাদিক বান্ধব, তার চেয়ে অধিক মালিক বান্ধব। অথচ গণমাধ্যমকে দেওয়া সরকারের সকল সুবিধার অন্যতম শর্তই হচ্ছে- সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন ভাতা পরিশোধ করতে হবে। বেতন বকেয়া রাখা যাবে না। প্রিন্ট মিডিয়াতে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড কার্যকর না থাকলে সেই পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষেধ। কিন্ত বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। তথ্য অধিদপ্তর এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা মিলে প্রিন্ট মিডিয়ায় অর্থের বিনিময়ে ভুয়া প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধির সার্টিফিকেট দেন। যার বিনিময়ে ওই পত্রিকাটির বিজ্ঞাপনের রেট বৃদ্ধি পায়। এতে মালিক লাভবান হলেও সাংবাদিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না।

এক্ষেত্রে বিএফইউজে এবং ডিইউজে’র দুই অংশ যদি কঠোর অবস্থানে থাকতেন, তাহলে অন্তত করোনাকালে ডিএফপি থেকে সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা নিতে হলে সাংবাদিকদের বেতন পরিশোধ করেই নিতে হতো। একইভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ক্ষেত্রেও আমরা কঠোর অবস্থান নিতে পারিনি। আর আমাদের এই ব্যর্থতার সুযোগেই গণমাধ্যম মালিকরা আজ সাংবাদিক ছাঁটাই করে যাচ্ছে কোন রকম আইনের তোয়াক্কা না করে। এমনকি শ্রম আইন পর্যন্ত তারা মানছেন না।

সহকর্মীদের পথে বসার এই চিত্র গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য অনেক বেদনার। এই বেদনাটা আরও ক্ষতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন দেখি, মাননীয় মন্ত্রী মশাইদের ফাঁকা বুলি ‘করোনাকালে কোন মিডিয়া হাউজ থেকে সাংবাদিকদের ছাঁটাই করা যাবে না।’ এগুলো যে শুধুমাত্র মিডিয়ায় প্রচার পাওয়ার জন্যই বলা-এটা আমরা যারা সাধারণ সংবাদকর্মী তারা খুব ভালোভাবেই বুঝি।

এই বুঝের চেতনাটা আমাদের ভোটে নির্বাচিত নেতাদের মাঝে জাগ্রত হোক এমন প্রত্যাশার স্বপ্ন নিয়েই শুধু বলবো, গণমাধ্যম কর্মীদের অবস্থা ভাল না। তাদেরও পরিবার আছে। তাদেরও স্বপ্ন আছে, সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। অন্তত এই করোনাকালে কাউকে যেন ছাঁটাই করা না হয়, কোন সহকর্মী যেন বেতন বকেয়ার যন্ত্রনায় না ভোগেন- অন্তত এ দিকটা বিবেচনায় নিয়ে একটি জোটবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেন। আমরা সাধারণ গণমাধ্যম কর্মীরা আপনাদের পাশেই আছি- সবসময়।

লেখক:
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

• সংগৃহিত: টাইমলাইন থেকে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com