নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক কবি ও সমাজ সংস্কারক সুফিয়া কামাল। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে পশ্চাদপদ বাঙালির মানসপটে সচেতনার বীজ বুনেছিলেন এই মহিয়সী। ধর্মীয় গোড়ামি ও কুসংস্কারের যাঁতাকল থেকে বের হয়ে আত্মপরিচয়ের বিকাশ লাভে তিনিই ছিলেন কান্ডারি।
এই মহিয়সী কবির ২৩তম প্রয়াণ দিবস আজ ২০ নভেম্বর।
বঙ্গভঙ্গ রদ’র বছরেই বাঙালি নারী মুক্তির ত্রাতা হিসাবে আর্বিভাব ঘটে বেগম রোকেয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরী কবি সুফিয়া কামালের। পিতৃহারা সুফিয়া শৈশব থেকেই ছিলেন অধিকার সচেতন।
১৯১৮ সালে কোলকাতায় বেগম রোকেয়ার সান্নিধ্যই তাঁকে লেখক ও সমাজকর্মী হিসাবে আত্মপ্রকাশের পথ দেখায়। এরপর মহাত্মা গান্ধীর সাথে অসহোযোগ আন্দোলন, কবিতা নিয়ে কাজী নজরুলের ভূয়সী প্রশংসা কিংবা রবীন্দ্রনাথের সাহচার্য্য সবই ছিল তাঁর আগামী দিনের পাথেয়।
১৯২৩ সালে প্রথম গল্প বালিকা সৈনিক আর ১৯২৬ সালের প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় এই কবির। পরে আপন আলোয় আলোকিত হন বাঙলার ঘরে-ঘরে নারী জাগরণে।
পাকিস্তানী দখলদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সুফিয়া কামাল। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। এরপর পাকিস্তানী জান্তার চক্ষুশূল হন তিনি।
দেশমাতৃকার জন্য রাজপথে ছিলেন সরব। স্বাধীনতার পরও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ছিলেন উচ্চকিত। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পাশে থেকেছেন আমরণ।
সাহিত্যেও তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। কবিতা-গল্প-ছোট উপন্যাস ছাড়াও প্রবন্ধ-নিবন্ধে দেশ, নারী ও সমাজের গোড়ামির মূলে করেছেন কুঠারাঘাত।
মহিয়সী এই নারী, কবি ও সংস্কারক কর্মগুণে পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ সব সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৯৯ সালের আজকের দিনে প্রয়াত হন জননী সাহসিকা সুফিয়া কামাল।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে উল্লেখ করেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তার জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে। তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতাচর্চা শুরু করেন। সুললিত ভাষায় ও ব্যঞ্জনাময় ছন্দে তার কবিতায় ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও সমাজের সার্বিক চিত্র।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ