‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়, তবু কেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়’– জনপ্রিয় এ গানের গীতিকার ও কবি জাহিদুল হক আর নেই। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আজ (১৫ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন কবি গাজী রফিক।
এ প্রসঙ্গে কবি গাজী রফিক বলেন, গত মাসের ২০ তারিখ তিনি স্টোক করেছিলেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্তি হয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়।
জাহিদুল হক গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও গীতিকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার জন্ম ১৯৪৯ সালের ১১ আগস্ট ভারতের আসামের বদরপুর রেলওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক পিতার কর্মস্থলে। পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের আকদিয়া গ্রামের ভূঞা বাড়ি।
১৯৬৩ সালে জাহিদুল হক চট্টগ্রামের নগেন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৬৭ সালে ফেনী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ভর্তি হন।
জাহিদুল হক বাংলা একাডেমির একজন ফেলো। তিনি রেডিও ডয়েচে ভেলের সিনিয়র এডিটর ও ব্রডকাস্টার হিসেবে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। দৈনিক সংবাদের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে চাকরি করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ বেতারের উপ-মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এ কবি ও গীতিকার।
জাহিদুল হক বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রকাশিত ‘বেতার বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি টানা চার বছর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
কবিতার পাশাপাশি তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছেন। ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’-সুবীর নন্দীর কণ্ঠের জনপ্রিয় এ গানটি ছাড়াও তার উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে, ‘স্বাধীনতা তুমি আমার বাড়িতে এসো’(শিল্পী- শাম্মী আখতার), ‘স্বপ্ন আমার কাজল পুকুর তুমি’ (শিল্পী- এন্ড্রু কিশোর), ‘যে দেশে বাতাস স্মৃতির স্পর্শে ভারী’ ( শিল্পী- সুবীর নন্দী ও সামিনা চৌধুরী), ‘তোমার প্রিয়তমার কাছে তুমি ছিলে মনোহর’ (শিল্পী- সামিনা চৌধুরী), ‘কতোদিন পরে দেখা, ভালো আছো তো’ (শিল্পী- হাসিনা মমতাজ ও মোহাম্মদ হান্নান), ‘আমি তোমার ভালোবাসার খাঁচায় ধরা দেবো (শিল্পী- রুনা লায়লা) প্রভৃতি।
জাহিদুল হকের কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প গান মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৮টিও বেশি। তার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ হয় ১৯৮২ সালে ‘পকেট ভর্তি মেঘ’ শিরোনামে। তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘পকেট ভর্তি মেঘ’, ‘তোমার হোমার’, ‘নীল দূতাবাস’, ‘সেই নিঃশ্বাসগুচ্ছ’, ‘পারীগুচ্ছ ও অন্যান্য কবিতা’, ‘এই ট্রেনটির নাম গার্সিয়া লোরকা’, ‘এ উৎসবে আমি একা’ ইত্যাদি। খ্যাতিমান এ কবি ও গীতিকারের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ