বাংলা৭১নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে শওকত ওসমান রচি: নিউইয়র্কের সেই চিত্র আর নেই। জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলীন বা ব্রঙ্কস। বেড়েই চলছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা।
আগে প্রবাসী একা এ দেশে আসলেও পরবর্তীতে বিয়ে করে স্ত্রী নিয়ে আসছেন। সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। নিয়ে আসছেন পিতা-মাতাকে। এরপর ভাই-বোনকে। এছাড়াও কাছের স্বজনরাও চলে আসছেন বিভিন্ন ভাবে। প্রবাসীদের এ সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি তাদের মৃত্যুর হারের সংখ্যাও বাড়ছে।
আগে প্রিয় স্বজনদের কেউ মারা গেলে তার লাশ অনেক ব্যয় করে দেশে গ্রামের বাড়িতে পাঠাতেন প্রবাসীরা। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। দেশের বাড়িতে প্রবাসীর কাছের কেউ না থাকায় লাশ আর গ্রামের বাড়ি পাঠাচ্ছেননা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানেই সমাহিত করছেন।
এরফলে বাংলাদেশ সোসাইটি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের রাখা রিজার্ভ কবরের সংখ্যা এখন কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নিউইয়র্কে এ কমে যাওয়া হারের সংখ্যাটা তুলনামূলক একটু বেশি। এখানে কবরের জায়গার দামও বেশি, দাফনের খরচও বেশি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে লাশ পাঠাতে গেলেও ১২ থেকে ১৪ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। মূলত: নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে মুসলিম গার্ডেনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের স্বজনদের লাশ সমাহিত করে থাকেন। প্রায় ৮ বছর আগে একটি কবরের জায়গা এখানে বিক্রি হতো ৭’শ ডলারে। ৮ বছর পর বর্তমানে এর দাম চারগুন বেড়ে ৩ হাজার ডলারে ছাড়িয়েছে। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কবর কিনলে এ হিসাব।
এছাড়া ফিনারেল, লাশের কেইস বানানো, কবর খোঁড়া সহ আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ আরো ৩ থেকে ৪ হাজার ডলার ব্যয় হয়। তবে একটু দূরে নিউজার্সীতে কেউ কবর কিনে দাফন করলে সেক্ষেত্রে খরচ পড়ে প্রায় আড়াই হাজার ডলার। তবে দূরত্বের কারনে অনেকেই নিউজার্সী অভিমুখি হতে চাননা। কবর জিয়ারতের জন্য নিউইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশীরা লং আইল্যান্ডের এ কবরস্থানকেই বেছে নেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রবাসীদের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের সংখ্যাও সমানতালে বেড়ে চলছে। একটি সংগঠন ভেঙ্গে একই নামে দুই অথবা তিনটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। তবে এসব সংগঠনগুলোর কোন কোনটি নিজেদের উদ্যোগে সদস্যদের জন্য লং আইল্যান্ডে কবর কিনে রাখছেন।
প্রবাসীদের এ সমস্যা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সোসাইটি নিজেই কবর কেনার উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে সোসাইটির তৎকালীন কার্যকরী কমিটি লং আইল্যান্ডে ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে মুসলিম গার্ডেন সেকশনে ব্লক-এ তে ২১০টি কবর কিনে। এতে ব্যয় হয় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
প্রবাসীদের ভবিষৎ বিবেচনা করে ২০০৯ সালে কেনা এসব কবর প্রথম বছরে একটিও ব্যবহার হয়নি। ২০১০ সালের অক্টোবরে এসে প্রথম একটি কবর কাজে লাগে জ্যাকসন হাইটস এলাকায় জনৈক দীল এম খানের আত্মহত্যার পর। ২০১১-১২ তে তেমন কাজে লাগেনি কেনা কবরগুলো। তবে ইদানীং চাহিদা বেড়েছে। ইতোমধ্যে ৯৯টি কবর হস্তান্তর করেছে সোসাইটি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, প্রবাসীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় কবরের চাহিদা বাড়ছে। আমরা নতুন কবর না কিনলে বাকিগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, শিগগির এ ব্যাপারে সোসাইটির কার্যকরি পরিষদের একটি বৈঠকে নতুন কবর কেনার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগে আমরা প্রবাসীদের ফ্রি কবর দিলেও এখন দিতে পারছিনা। এখন মিনিমাম খরচ নিচ্ছি। তিনি বলেন, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে একটি কবর কিনেন, তাকে ৩ হাজার ডলারের বেশি খরচ করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা তাকে অর্ধেক খরচে দিচ্ছি।
আব্দুর রহিম হাওলাদার জানান, কবর হস্তান্তর বাবদ যে ডলার সোসাইটি পাচ্ছে তার সাথে আরো ডোনেশন যোগ করে নতুন কবর কেনার পরিকল্পণা করা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস/এসওআর