নতুন নিয়মে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেইনি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের ৬৪ জেলায় তিন হাজার শূন্য পদের বিপরীতে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া চলবে আগামী ৭ অক্টোবর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের লক্ষ্যে জেলাভিত্তিক শূন্য পদের বিবরণ বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে https://www.police.gov.bd/ প্রকাশ করা হয়েছে। আবেদনের সময় প্রায় এক মাস হলেও এরইমধ্যে কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদনের হিড়িক পড়েছে। গত ৬ দিনে এ পদে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদরদফতর জানিয়েছে, এবার কনস্টেবল নিয়োগের আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১০ হাজারের মতো আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জমা পড়েছে চট্টগ্রামে। ৬ দিনে এ জেলা থেকে ৫ হাজার ৫০৪ জন আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম থেকে ১৩৫ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী কনস্টেবল নিয়োগ দেবে পুলিশ।
এছাড়াও টাঙ্গাইল থেকে ৪ হাজার ৩০৮, ময়মনসিংহে ৪ হাজার ১৪২, সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৯২৯, ঢাকায় ৩ হাজার ৭৭২, বরিশালে ৩ হাজার ৭১৭, রংপুরে ৩ হাজার ৫২৬, কুমিল্লায় ৩ হাজার ২৯০, রাজশাহীতে ৩ হাজার ২৭৫, পাবনায় ৩ হাজার ৫৯ ও নওগাঁয় ২ হাজার ৬৯৪ জন আবেদন করেছেন।
এবার কনস্টেবল পদে ন্যূনতম এসএসসি পাস ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে বাংলাদেশি যেকোনো নারী ও পুরুষ আবেদন করতে পারবেন। তবে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ যাদের উল্লিখিত বয়স শেষ হয়ে গেছে, তাদের জন্যও নতুন নিয়মের পরীক্ষায় আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য কোটা অনুসরণ করা হবে।
২০২০ সালের শেষ দিকে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও যোগ্যতা-সংক্রান্ত কিছু মানদণ্ড নির্ধারণের কারণে তা পিছিয়ে যায়। এরপর এ নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেশে করোনার ঊর্ধ্বগতির ফলে তা পিছিয়ে যায়।
নতুন নিয়মের পরীক্ষার ধাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, শারীরিক মাপ ও ফিজিক্যাল অ্যান্ডুরেন্স টেস্ট, লিখিত পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা, প্রাথমিক নির্বাচন, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ।
যা থাকছে নতুন নিয়মে
পুলিশ সদরদফতর জানায়, আবেদনকারীরা শুধুমাত্র অনলাইনে police.teletalk.com.bd-এ ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দেবেন। ওয়েবসাইটে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েববেজড স্ক্যানিং করা হবে। আবেদনকারীর মোবাইল নম্বরে একটি এসএমএস করা হবে। এসএমএসে নিয়োগ-সংক্রান্ত ওয়েব পোর্টালে লগইন করার জন্য ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। সেই পোর্টালে লগইন করে আবেদনকারীকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে হবে। প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে দুই কপি করে সঙ্গে নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে অংশগ্রহণ করতে হবে।
নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর দিন প্রার্থীদের পুলিশের নির্ধারিত স্কেলে বুকের মাপ ও ওজন-উচ্চতা নেওয়া হবে। এরপর প্রার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে তাকে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ‘যোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে তার ফরমে একটি সিল দেওয়া হবে।
পরবর্তী ধাপে অনুষ্ঠিত হবে শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা। এ পরীক্ষার আগে প্রার্থীকে ‘ইনডেমনিটির ঘোষণাপত্র’ নামে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমে ওই প্রার্থী ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ’ আছেন বলে ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করবেন।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ধাপে ধাপে ৭টি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে- দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প, হাই জাম্প, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইমিং। এসব ধাপের কোনো একটিতে অকৃতকার্য হলে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে না এবং সেখানেই তার পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের ষষ্ঠ ধাপে রয়েছে ড্র্যাগিং পরীক্ষা। এ ধাপে পুরুষ প্রার্থীদের ১৫০ পাউন্ডের টায়ারকে টেনে ৩০ ফুট দূরত্ব এবং নারী প্রার্থীদের ১১০ পাউন্ড ওজনের টায়ার ২০ ফুট দূরত্বে আনতে হবে। এছাড়াও রোপ ক্লাইমিং পরীক্ষায় পুরুষদের ১২ ফিট ও নারীদের ৮ ফিট দড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হবে।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের সব ডকুমেন্ট নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ে ৪৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৫ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এরপর লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার পর উত্তীর্ণদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশে দুই লাখ ১০ হাজারের মতো ফোর্স রয়েছে। ২০১৯ সালে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধাপে ধাপে আরও ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের নির্দেশনা দেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ