আমের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠছে নওগাঁ। এখানকার আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়া দিন দির এর কদর বাড়ছে। তবে ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকায় এ অঞ্চলের আম দেশের বিভিন্ন বাজারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর আম বলে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, জেলার ঠা-ঠা বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলার আংশিক এলাকায় পানি স্বল্পতার কারণে একটি মাত্র ফসলের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে ধানের আবাদ ছেড়ে আম চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। দেশে যত ধরনের আম উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলটিতে তার প্রায় সবধরনের আম উৎপাদন শুরু হয় এখানে। একযুগ আগে যে জমিতে ধান চাষ হতো, সেখানে এখন চাষ হচ্ছে আম। লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা আমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এখানে আম্রপালি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙা, আশ্বিনা, ঝিনুক, বারী-৪ ও গুটি জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার আমের আকৃতি ও গঠনগত অবয়ব কেবল দেখতে সুন্দর ও আকর্ষণীয় নয় খেতেও সুস্বাদু। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় ধান চাষ ছেড়ে আমচাষের দিকে অধিক হারে ঝুঁকে পড়েছেন। আমকে কেন্দ্র করে পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় প্রায় তিনশতাধিক মৌসুমি আমের আড়ত গড়ে ওঠেছে। যেখানে থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। গত বছর ছিল ২৪ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের থেকে এক হাজার ৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে আমবাগান গড়ে ওঠেছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৩৫ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৩৩৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৬২৫ হেক্টর, পত্নীতলায় তিন হাজার ১৫ হেক্টর, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর, সাপাহারে আট হাজার ৫২৫ হেক্টর, পোরশায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর, মান্দায় ৪০০ হেক্টর ও নিয়ামতপুরে এক হাজার ১৩০ হেক্টর।
জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ মে থেকে গুটি জাতের আম পাড়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। ঘোষিত সময় অনুযায়ী আম না পাকায় সময় পিছিয়ে ২৫ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে পাড়া শুরু হয়। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় চলছে প্রশাসনের বিশেষ লকডাউন। আগামী ৯ জুন পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। এ কারণে বাইরের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছে না। এতে দাম তুলনামূলক কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সাপাহারের বাজারে গুটি, গোপালভোগ ও খিরসাপাতা (হিমসাগর) পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে গুণগত মান ভেদে গোপালভোগ মণপ্রতি ১২০০-১৪০০ টাকায়, খিরসাপাতা ১৫০০-১৬০০ টাকায় ও গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাপাহারের আমচাষী প্রদীপ সাহা বলেন, ছয় বিঘায় আম্রপালি, এক বিঘায় বারী ফোর ও অল্পকিছু ল্যাংড়া ও ব্যানানা আমের চাষ করেছেন। যা কিছুদিন থেকে বিক্রি শুরু করেছেন। লকডাউনের কারণে দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেনা ফলে দাম কিছুটা কম। লকডাউন শেষে আমের বাজারদর কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় মৌসুমি আম ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড়শ টি দোকান গড়ে ওঠেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এ কারণে ৫০-৬০ টি দোকান চালু আছে। বিগত বছরে আম মৌসুমে সাপাহার থেকে প্রতিদিন যেখানে প্রায় ৩০০-৩৫০টি ট্রাকে করে আম যেত। সেখানে এখন ৫০টির মতো ট্রাকে আম যাচ্ছে।
সাপাহার আম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, লকডাউনের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এ কারণে আমের দাম তুলনামূলক কম। তবে লকডাউন শেষ হলেই দাম বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামশুল ওয়াদুদ বলেন, চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি গড়ে ১২ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে আম উৎপাদনের পরিমাণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে তিন লাখ ১০ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
তিনি আরও বলেন, গড়ে প্রতিকেজি আম ৫০ টাকায় বিক্রি হলে উৎপাদিত আমের মোট বিক্রিত অর্থের পরিমাণ হবে এক হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ