ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি একাই নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। তবে, তাদের ঋণের পুরো তথ্য পেতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। এসব ঋণের বিপরীতে প্রকৃত সম্পদ বন্ধক দেওয়া হয়নি। এস আলম গ্রুপের সম্পদ খুঁজে পাওয়ার পর তা ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে। ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ে তিনটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যাংকের ঋণ, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের ওপর নিরীক্ষা করবে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন তিনি।
গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমরা নতুন পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম, ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতি। তা প্রতিদিন কমে আসছে। আজকে কমে তা ২ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আশা করি, এ বছরের মধ্যে তা ইতিবাচক ধারায় ফিরবে।
তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সমস্যাটি অনেক বড়। ২০২২ সালে এ ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট শুরু হয়। ফলে, ব্যাংকের ওপর গ্রাহকদের আস্থা দিন দিন কমেছে। এজন্য আমরা দায়িত্ব নিয়েই পথনকশা প্রণয়ন করেছি। প্রতিদিন ব্যাংকে উপস্থিত থেকে তদারকির চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চলতি বছর পুরোটাই গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর জন্য চলে যাবে। আগামী বছরও গ্রাহকের আস্থা ফেরানোর জন্য কাজ চলবে। ২০২৬-২৭ সাল হবে ইসলামী ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২৮-৩০ সাল হবে ইসলামী ব্যাংকের এগিয়ে যাওয়ার বছর। পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় ব্যাংকিং খাত অনিয়ম- দুর্নীতির দুর্গে পরিণত হয়েছিল। নামে-বেনামে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়ে অনিয়ম করেছে এস আলম গ্রুপ। এ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল ৮টি ব্যাংক। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েই ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেয় ব্যাংক খাত থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লুটপাট করেছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংকি খাতে সংস্কার শুরু করেছে।
এ পর্যন্ত ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো হলো—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এই আটটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল। এর বাইরে ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংকের পর্যদ পুনর্গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ