বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: দেশের বাজারে এনার্জি ড্রিংকের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বাজারে বিক্রিত এনার্জি ড্রিংকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিএসটিআইয়ের সভায় ‘এনার্জি ড্রিংক’ শিরোনামে জাতীয় মান প্রণয়ন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং কার্বোনেটেড বেভারেজ ব্যতীত ‘এনার্জি ড্রিংক’ বা অন্য কোনো নামে পণ্য উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের কোনো সুযোগ নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিএসটিআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরিচালক (প্রাক্তন) আইএফএসটি, বিসিএসআইআর ও সফট ড্রিংক অ্যান্ড বেভারেজ শাখা কমিটির সভাপতি ড. মো. জহুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় উপস্থিত এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বাজারে বিক্রিত সফট ড্রিংকের ক্যাফেইনের মাত্রা প্রতি কেজিতে ১৪৫ এমজি থাকলেও এনার্জি ড্রিংকে এ মাত্রা প্রতি কেজিতে ৩২০ এমজির বেশি পাওয়া গেছে।এনার্জি ড্রিংকের নামে নেশাজাতীয় পানীয় বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, রাজধানীসহ সারাদেশে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন মিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংক অবাধে বিক্রি হচ্ছে। গেল বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে ৭টি কোম্পানির উৎপাদিত এনার্জি ড্রিংক সংগ্রহ করে রাজধানীর তিনটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠায়।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ল্যাবরেটরির একাধিক নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্রে জানায়, পরীক্ষায় ৭টি কোম্পানির পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর নিয়মানুসারে যে কোনো পানীয়তে ক্যাফেইনের মাত্রা ২০০ পর্যন্ত স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। কিন্তু দেশের তিন ল্যাবরেটরির পরীক্ষাতেই ওই ৭টি এনার্জি ড্রিংকে ক্যাফেইনের মাত্রা ৭০০ এর কাছাকাছি পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন স্বাস্থ্য সাময়িকীতে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন লিভারে চর্বি জমায়। হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। এছাড়া বুক ধরফরানি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, উচ্চরক্তচাপ, ঘুমের ব্যঘাত, শরীরে অ্যাড্রেনালিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে টানটান উত্তেজনা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।
দিনের পর দিন অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে প্রবেশের ফলে অসুখ সারাতে ব্যবহৃত ওষুধও কাজ করে না বলে স্বাস্থ্য সাময়িকী থেকে জানা যায়।
মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইনমিশ্রিত বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংক নেশার জগতে নীরব সংযোজন বলেও অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন নেশাজাত দ্রব্য মাদকাসক্তরা গোপনে সেবন করলেও এনার্জি ড্রিংকের আসক্তি বাড়ছে প্রকাশ্যেই।
উল্লেখ্য, অত্যাধিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাছে এনার্জি ড্রিংক বিক্রি নিষিদ্ধের পরিকল্পনা করে রেখেছে যুক্তরাজ্য সরকার।
বাংলা৭১নিউজ/জেড এইচ