শহীদুল ইসলাম সোহাগ ♦ দেশে এখন এক কোটি ২০ লাখ গ্রাহক এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) সার্ভিস বা বুথ সার্ভিস সুবিধা নিচ্ছেন। দেশের ব্যাংকিং খাতকে যুগোপযোগী করতে ১৯৯৪ সাল থেকে বুথ সার্ভিস চালু করা হয়।
দেশীয় ব্যাংকের মধ্যে সর্বপ্রথম ডাচ বাংলা ব্যাংক লি. এই এটিএম সেবার কার্যাক্রম চালু করে।পর্যায়ক্রমে ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারী ব্যাংকও এই এটিএম সেবার কার্যাক্রম শুরু হরে।
এদিকে এটিএম বুথ সেবার ৫০ বছর পূর্তি হয় ২০১৭ সালে।আর এই ৫০ বছর পূর্তিতে ব্যাংকিং খাত আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে। বর্তমানে এটিএম বুথের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ কোটি টাকার লেনদেন করেন গ্রাহকরা।যার ফলে এই সেবার ক্ষেত্র ও পরিধি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান মানিক উত্তরবঙ্গের শিক্ষা নগরী রাজশাহী শহরের সাহেববাজারে ব্যবসা করেন।তার প্রতিদিনের লেনদেনর অর্থ ব্যাংকে জমা দেন।আর এই জমাকৃত অর্থ উত্তলন থেকে শুরু করে ঢাকায় এসে তার ব্যবসার মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত সকল ব্যয় নির্বাহ করেন এটিএম বুথের মাধ্যমে।
হাবিবুর রহমান মানিক তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আরও জানান, “এক সময় এমন ব্যবস্থা ছিলো যে দোকানের মালামাল কিনতে ঢাকা যাবো, তার আগেই টাকা ব্যাংকে টিটি করতাম। আবার অনেক সময় নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে যাওয়াটা অনেক কঠিন বিষয় ছিল।যদি ছিনতাই হয়? কিন্তু এখন সেই ঝামেলা বা উদ্বেগটি আমার মধ্যে নেই।ঢাকা বা যেখানেই ব্যবসার কাজে যাচ্ছি, সেখানেই এটিএম বুথ ব্যবহার করি।বলতে গেলে আমি এখন এটিএম বুথের ওপর পুরো-পুরি নির্ভরশীল।এটিএম বুথ আমাদের অর্থনৈতিক জীবনের গতিকে পরিবর্তন করেছে।”
চট্রগ্রামের পর্যটন ব্যবসায়ী রেয়ান চৌধুরী এটিএম বুথের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের পর্যটন কেন্দ্রে দেশি ও বিদেশি অনেক ভ্রমণ বিলাসি মানুষ আসে।তারা কখনো কখনো নগদ অর্থ আমাদের ক্যাশ কাউন্টারে দেয়।কিন্তু বেশীর ভাগ সময়ই তারা আমাদেরকে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে বিল দেন।এতে তাদেরও অর্থ নিরাপদ থাকে আবার আমাদের অর্থও নিরাপদ থাকে।তাই বর্তমানে এই এটিএম বুথ বা মেশিনের কারণে আমাদের ব্যবসায়ীক অর্থনীতির গতি ও ক্ষেত্র আরো বিস্তার হয়েছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, “ব্যাংকের অলটারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল হিসেবে এটিএম বুথ কার্যকরী মাধ্যম।বর্তমানে দেশে প্রায় ১০ হাজার এটিএম বুথ আছে।এখন এক কোটি ২০ লাখ গ্রাহক এই এটিএম বুথের সেবা নিচ্ছেন।”
গ্রাহকরা এটিএম বুথের সেবা নিতে আগ্রহী মন্তব্য করে তিনি জানান, “বর্তমানে এটিএম বুথের সেবা পেতে গ্রাহকরা এক কোটি ১০ লাখ ডেবিট কার্ড ও ১০ লাখ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছে।” ২০১২ সালে জাতীয় পেমেন্ট সুইচ চালু করা হয়েছে।তাই যে কোন এটিএম বুথ থেকে লেনদেন করা আরো সহজ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শুভংকর সাহা বলেন, “এটিএম বুথের সেবাকে আরো দ্রুত, শক্তিশালী ও কার্যক্রর করার জন্য, দেশীয় সকল ব্যাংকগুলোকে নিয়ে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।”
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিবি’র) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আনিস এ খান জানান, “একজন গ্রাহকের অর্থ চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না এই এটিএম বুথের কারণে।গ্রাহক যখন খুশি, যেভাবে ইচ্ছা তার এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ২৪ ঘন্টা অর্থ তুলতে পারবে।” আমাদের এটিএম বুথ সেবার ব্যবস্থাটা আলাদা বিভাগ দেখা-শুনা করে।সে ক্ষেত্রে ব্যাংকে পূর্বের মতন আর লাইনে দাড়িয়ে টাকা তুলতে হয় না।
আনিস এ খান আরও জানান, এখন সময় নষ্ট না করেই একজন গ্রাহক তার কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন।সে ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, এটিএম বুথ ব্যবস্থা ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্র ও পরিধি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ