বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:২০ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

এখন শুধুই স্মৃতি

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শনিবার, ২ জুন, ২০১৮
  • ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, মো: হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি: উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উপজেলার  গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গারুর গাড়ি এখন অধিকাংশ অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে। এখন ওই সব সামগ্রী রূপকথার গল্পমাত্র এবং বিলুপ্ত হয়ে স্থান পেয়েছে কাগজে কলমে, বইয়ের পাতায়।

মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। আবার অনেক শহরে শিশু গরুর গাড়ি দেখলে বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করে গরুর গাড়ি সম্বন্ধে।

যুগ যুগ ধরে গরুর গাড়ি কৃষকের কৃষিক্ষেত্রের ফসল বপন এবং ফসল আনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত। গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা এক প্রকার যান বিশেষ। এ যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এ গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে।

আর পিছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পিছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে গরুর গাড়ি এক দশক আগেও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে অনেক ব্যবহৃত হত। অনুমান করা হয়, খ্রিস্টজন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে।

উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও দক্ষিণ আফ্রিকার যাতায়াত ও মালবহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এইচ. রাইডার হ্যাগার্ড’এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কিং সলোমনস মাইনস’ নামক উপন্যাসেও গরুর গাড়ি সম্বন্ধে বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাতে রাতে বিশ্রাম নেওয়ার সময় বা বিপদে পড়লে তারা প্রায় গরুর গাড়িগুলোকে গোল করে সাজিয়ে এক ধরনের দুর্গ গড়ে তুলে তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করত। চেঙ্গিজ খানের নাতি বাতু খানের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে যে মোঙ্গল আক্রমণ চলে সেখানে তার প্রতিরোধে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা গরুর গাড়ির ব্যবহার করা হয়েছিল। দুই যুগ আগে গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধু যেত।

গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। বিয়ে বাড়ি বা মাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন বাহন। বর পক্ষের লোকজন বরযাত্রী ও ডুলিবিবিরা বিয়ের জন্যে ১০ থেকে ১২টি গরুর গাড়ির ছাওনি (টাপর) সাজিয়ে শশুরবাড়ী ও বাবার বাড়ী আসা যাওয়া করতো। রাস্ত-ঘাটে গরুর গাড়ি থেকে পটকাও ফুটাতো। যে সব গৃরস্থ পরিবারের পরিবারের গাড়ি ছিল, তাদের কদরের সীমা ছিল না। কৃষকরা  প্রতিদিন ফজরের আজানের আগে গরুর গাড়িতে কখনো জৈব সার তথা গোবরের সার, কখনো গরুর খাবার ও লাঙ্গল-মই-জোয়াল নিয়ে যেত মাঠে। গাইত উঁচু সুরে গাইত, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের বিধি…’।

গরুর গাড়ীর চালক বা গাড়িওয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলতো, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিবার নাও মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’।

৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের রাস্তা পাড়ি দিয়ে কৃষকেরা জমি চাষাবাদ এবং মালামাল বহনের জন্য গরুর গাড়ি বাহন হিসেবে ব্যবহার করতো। অনেক অঞ্চলে রাস্ত পাকা না থাকায় এক সময় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতো না। ফলে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে নানাধরণের মোটরচালিত যানের আধিক্যর কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবী ট্যাক্সি, অটো রিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না।  পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি হচ্ছে, পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন।

শুধু ১ বৈশাখে ঘটা বাংলা নর্ববর্ষ পালন করলে, টাপর তোলা গরু-মহিষের গাড়ী বর-বধু সেজে পান্তা ইলিশ খেলে, মুড়ি, উখড়া, পাঞ্জাবী, পাইজাম, ধুতি পড়লে কিংবা সে দিন মাটির কলস, মাটির পাতিল, বাংলা নববর্ষ পালন করলে হবে না। প্রতিটি দিন এগুলো সংরক্ষন করতে হবে, ব্যবহার বাড়াতে হবে।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com