বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: কারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য এসেছেন। এ দেশে তাঁর যে পাঠক আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে থেকেই এখানে আসা। মঙ্গলবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত ‘কথোপকথন’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলার কালকের পর্বের নাম ছিল ‘আটমোস্ট এভরিথিং, অরুন্ধতী রায় ইন কনভারসেশন উইথ শহিদুল আলম’। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি একটি লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর শহিদুল আলমের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
অরুন্ধতী রায় বলেন, ‘আমার দুটো সত্তা। একটি লেখক সত্তা ও অন্যটি কর্মী সত্তা। লেখক হিসেবে আমি বাংলাদেশের পাঠকের কাছে এসেছি।’
কথোপকথনে অরুন্ধতী বাক্স্বাধীনতা, জাতীয়তাবাদ, উন্নয়ন, গণতন্ত্র, বড় বড় প্রকল্প—এসব নিয়ে কথা বলেন।
অরুন্ধতী বলছিলেন, ‘আমি নদীকে কেন্দ্র করে বাঁধ কিংবা কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে বিশ্বাসী নই। নদীকে ভাগ করা যায় না। বড় বড় বাঁধ নির্মাণের পেছনে ফ্যসিবাদ আর জাতীয়তাবাদী চেতনা লুকানো থাকে।’
ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট, রামপালসহ নানা বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে ভারতের প্রগতিশীল গোষ্ঠী উচ্চকণ্ঠ নয় কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অরুন্ধতী রায় বলেন, তিনি এ মন্তব্যর সঙ্গে পুরোপুরি একমত। তিনি জেনে- বুঝে এ বিষয়গুলো নিয়ে লিখছেন। প্রয়োজনে এই ইস্যুতে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। উন্নয়নের প্রথাগত ধারণার বাইরে ভাবেন অরুন্ধতী।
তিনি বলেছেন, অক্সফামের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভারতে ৫০ কোটি লোকের সম্পদ পুঞ্জীভূত নয়জন লোকের কাছে। তাই উন্নয়নের কথা এলে লোকজন জানতে চায়, কার জন্য উন্নয়ন।
এদিকে একটি অনুষ্ঠান ঘিরে দিনভর নাটকীয়তা হয়েছে। আয়োজক সংগঠন ছবিমেলার ড. শহিদুল হক বিশ্বে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী। অতিথি অরুন্ধতী রায় ভারতের বিখ্যাত লেখক। চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে আসা অরুন্ধতীর বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে। সোমবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই অনুষ্ঠানের অনুমতি বাতিলের কথা জানানো হয় আয়োজকদের। পরে তারা ছুটেন বিকল্প ভেন্যুর সন্ধানে।
ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে ভেন্যু ঠিক করে চলে বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন। ছবিমেলার পক্ষ থেকে আমন্ত্রিতদের সেখানে যাওয়ার আহ্বানও জানানো হয়।
বিকালে ওই ভেন্যুর সামনে আমন্ত্রিতরা গেলেও অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে নাটকীয়তার কারণে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। অবশেষে অরুন্ধতী বক্তৃতা মঞ্চে আসেন পৌনে এক ঘণ্টা দেরিতে। আলোকচিত্রী শহিদুল হকের সঞ্চালনায় ২ ঘণ্টার অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বুকার জয়ী এ লেখক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচনকে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। আজ গণতন্ত্র যাদের প্রতিনিধিত্ব করে তা খুবই স্বল্প মানুষের জন্য। অরুন্ধতী রায় বলেন, রাজনীতি এখন মানুষের জন্য মনে হয় করা হয় না। এখন রাজনীতি হয়- নদী, বাঁধ, বিভিন্ন প্রকল্পকে ঘিরে। এসব কিছুকে রূপ দেয়ার জন্য মানুষের চিরন্তন জীবন বিপন্ন করা হয়। তিনি বলেন, রাজনীতিকদের খুবই ক্ষমতাবান মনে হলেও অনেক সময়ই তারা ক্ষমতাহীন। কাশ্মীর ইস্যুতে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদেরও শুনতে হবে, তাদেরও বলার আছে। তাদেরকে আমরা কতোটা মূল স্রোতে আনতে পারছি।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, সাংবাদিক মাহফুজ আনাম, অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, সাংবাদিক নূরুল কবীর, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান, আনিসুল হক, নারী অধিকার নেত্রী খুশী কবীর, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, জোনায়েদ সাকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অরুন্ধতী তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’-এর কিছু লাইন শ্রোতাদের উদ্দেশে পড়ে শোনান। বলেন, আমি একজন মোবাইল রিপাবলিক। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা পারমাণবিক বোমার মতো চেপে বসে আছে। বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তান এভাবে আমি এদেশগুলোকে ভাগ করতে চাই না। আসলে এগুলো একই দেশ। গ্লোবাল ভিলেজ মানলে এই ধারণা মানতে হবে। যখন আমরা গ্লোবাল ভিলেজ ভাববো তখন জাতীয়তাবাদের প্রশ্ন আসবে কেন?
‘অ্যাটমোস্ট এভরিথিং’ শিরোনামে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে শহিদুল আলম অরুন্ধতীকে প্রশ্ন করেন, আপনি এখানে কেন এসেছেন? তখন তিনি বলেন, আমি আপনার জন্য এসেছি। আপনাদের জন্য এসেছি। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ আলোকচিত্র উৎসব ছবিমেলায় অংশ নিতে গত ৩রা মার্চ ঢাকায় আসেন বুকার পুরস্কারবিজয়ী ভারতীয় লেখক অরুন্ধতী রায়।
ভারতীয় এ লেখক বুদ্ধিজীবী এবং অ্যাকটিভিস্ট হিসেবেও পরিচিত। ‘দ্য গড অব স্মল থিংসের জন্য খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছান অরুন্ধতী। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসটি ১৯৯৮ সালের ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়াও তিনি মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে জড়িত।
বাংলা৭১নিউজ/এসকে