বাংলা৭১নিউজ,ঢাকা: কোনো অংশীদার খুঁজে পাচ্ছে না জ্বালানি বিভাগ। অথচ বছর পেরিয়ে গেল। অবশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সমুদ্রে সাঙ্গু নামের একটি ছোট আকারে গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলা হয়েছে। যদিও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এলাকার স্থলভাগ এখনও অনুসন্ধানের বাইরেই রয়ে গেছে।এছাড়াও দেশের মোট আয়তনেরও প্রায় এক-দশমাংশ এলাকায় এখন পর্যন্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়নি। কেন শুরু হয়নি এর ব্যর্থতার দায় বাপেক্সের পাশাপাশি জ্বালানি বিভাগের ওপরউ বর্তায়।যদিও এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী বলেছেন, খুব শিগগিরই ওইসব এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা যায়, শুধু বাপেক্স নয় জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই এখন পর্যন্ত পার্বত্য এলাকা অনুসন্ধান কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ২০১০-১১ এবং ২০১৪-১৫ সালে দুই দফায় এ অনুসন্ধান কার্যক্রমে অংশীদার খোঁজে বাপেক্স। উদ্দেশ্য ছিল এখানে ওইসব কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা। যেহেতু পার্বত্য এলাকায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা বাপেক্সের নেই তাই অংশীদার খোঁজার অনুমতিও দেয় সরকার। প্রথম দফায় কয়েকটি কোম্পানি বাপেক্সের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও দেখায়। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সেবার আর অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় হয়নি। ফলে ওই এলাকার সম্পদ এখনও অধরাই থেকে যায় বাপেক্সের। এতেকরে ২০১০-১১-এর প্রক্রিয়া থেমে যায়।
যদিও তখন বাপেক্সের তরফ থেকে বলা হয়, চীনের সিনোপ্যাকের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি তারা চূড়ান্ত করে সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ সম্পর্কে কোনো সাড়া-শব্দ কারও কাছ থেকেই পাওয়া যায়নি। তবে অংশীদার বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ের রয়েছে বাপেক্স বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর মো. আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ব্রুনাই এবং জাপানের কয়েকটি কোম্পানির প্রস্তাব আছে। তাদের সবাই এখানে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরাও চাই এখানে দ্রুত কাজ করতে। কোন কোম্পানি কি প্রস্তাব দিয়েছে আমাদের কি প্রয়োজন তা বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই অনুসন্ধানের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি। অংশীদার চূড়ান্ত হলেই আমরা যৌথভাবে চট্টগ্রামের পটিয়া, জলাদি এবং সীতাকুণ্ডে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরু করব।
দেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে দেশের তিন জেলা রাঙামাটি, বান্দবরবান এবং খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত। যার মোট আয়তন ১৩ হাজার ২৮২ বর্গ কিলোমিটার। এর সঙ্গে চট্টগ্রামের আয়তন ৫ হাজার ২৮২ বর্গ কিলোমিটার যোগ করলে প্রায় ১৩ ভাগ এলাকা তেল গ্যাস অনুসন্ধানের বাইরেই রয়ে গেছে। ২০১০-১১-এর ওই প্রক্রিয়ার পর চার বছর পরে আবার অংশীদার খোঁজার কাজ শুরু করে বাপেক্স। নতুন করে পার্বত্য এলাকায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কোম্পানির কাছে আগ্রহপত্র চায় তারা।
শেষ পর্যন্ত ২০১৪-১৫ সালে চীনের জিও জাদি পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং লংহুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (বেইজিং) সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়ে অনেক দূর এগোলেও শেষ পর্যন্ত আগ্রহ দেখায়নি তারা। ফলে আবারও ওই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর ঠিক পাঁচ বছর পর আবারও তেল গ্যাস অনুসন্ধানে উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এখন আবার রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ব্রুনাই এবং জাপানের কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এর আগে দুই দফায় যে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল সেখানে প্রথম দফায় সরকারের অনুমোদন পাওয়া যায়নি। আর দ্বিতীয় দফায় বাপেক্স এবং সরকার চাইলেও আগ্রহী কোম্পানিটি শেষ পর্যন্ত চুক্তি করেনি। পার্বত্য এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধানে যেহেতু আমরা অভিজ্ঞ নই সেহেতু বিদেশি কোম্পানির সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই চলছে। টেন্ডার হবে তারপরই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
তবে দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জ্বালানি বিভাগের অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমদানি বিকল্প জ্বালানি খাতের বিকল্প দেশের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। ওইসব এলাকায় জরিপ করতে আমরা বিভিন্ন সময় টিম পাঠিয়েছি। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেই জরিপ সম্ভব হয়নি। তবে এ এলাকায় অতীতে যেসব জরিপ করা হয়েছে তার তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে রয়েছে। এর ভিত্তিতে জায়গাগুলোকে খুব সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়েছে আমাদের। তাই আশা করছি খুব শিগগিরই আবারও জরিপ কার্যক্রম শুরু হবে। এবং তারপর পরই ওইসব এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমও শুরু করা সম্ভব হবে।
সূত্র বলছে, ৫০ দশকের গোড়ার দিকে পটিয়াতে একটি বিদেশি কোম্পানি গ্যাসকূপ খনন করার কাজ শুরু করে। কিন্তু তখন ওই এলাকা দুর্গম এবং নিরাপত্তাহীন হওয়ার পাশাপাশি গ্যাসের বাজার তৈরি না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় তারা। পরবর্তী সময়ে ৬০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে জালদি এবং ৮০ দশকে সিতা পাহাড়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এটি আইওসি কাছালংয়ে কাজ করার জন্য প্রস্তত ছিল।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচবি