জুতা জোড়া সোনা, রুপা বা মূল্যবান কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি নয়। তবুও এটি মহামূল্যবান। জুতা জোড়া একবার চুরিও হয়েছিল। এরপর উদ্ধার হতে লেগে গেছে ১৩ বছর। সেই জুতা এবার নিলাম বিক্রি হলো দুই কোটি ৮০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকার সমান। এক জোড়া জুতা এতো মূল্যে বিক্রি হওয়ার যৌক্তিক এবং শৈল্পিক কারণ রয়েছে।
বিখ্যাত ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজে’র অভিনেত্রী জুডি গারল্যান্ড এই জুতা পায়ে দিয়েছিলেন। ১৯৩৯ সালে এই সিনেমাটি বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত এক নিলামে জুডি গারল্যান্ড এর সেই জুতা বিক্রি হয়েছে। ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ’ চলচ্চিত্রটিতে আরও অনেক জুতা পরেছিলেন জুডি গারল্যান্ড। সেগুলোর মধ্যে চার জোড়া এখনো টিকে আছে, সেই চার জোড়ার মধ্যে এক জোড়া বিক্রি হয়েছে এই রেকর্ড মূল্যে। সিনেমার বিখ্যাত এই জুতা সংরক্ষিত ছিল মিনেসোটার একটি জাদুঘরে। প্রায় এক মাস আগে এই জুতা বিক্রির নিলাম শুরু হয়।
ধারণা করা হচ্ছিলো অন্তত ৩০ লাখ ডলারে বিক্রি করা যাবে এই লাল জুতা। কিন্তু ধারণার থেকে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি হয়েছে। নিলামকারী প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ অকশন এই জুতোজোড়াকে হলিউড স্মৃতিচিহ্নের ‘হলি গ্রেইল’ বলে আখ্যা দিয়েছে। আর এই জুতা জোড়াই সিনেমার ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া স্মারক। ডালাসের নিলাম কক্ষে বিজয়ী ঘোষণার পর করতালির মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন উপস্থিত সবাই।
‘দ্য উইজার্ড অব ওজে’ ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করার সময় জুডির বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। সে সময় সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রখ্যাত মিডিয়া আউটলেট ভ্যারাইটি এই সিনেমাকে তাদের প্রথম ‘১০০ সেরা সিনেমা’ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে। সিনেমাটি নির্মিত হয় ১৯০০ সালে ছোটদের জন্য লেখা ফ্রাঙ্ক বমের বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব ওজ’ অবলম্বনে। যদিও বইতে ডরোথির জাদুকরী জুতা রুপার ছিল। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিচালক সিনেমায় এই জুতার রং বদলে দেন। লাল রঙের জুতা তৈরি করেন মূলত চুমকি খচিত করে। সিনেমায় দেখা যায়- একটি বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন ডরোথি তিনবার তার পায়ের গোড়ালি ঠুকিয়ে ‘বাড়ির মতো আর কিছু নেই’ বলতে বলতে জাদুর দেশ ওজ ছেড়ে ক্যানসাসে তার বাড়িতে ফিরে যায়।
ওই সিনেমায় মোট কত জোড়া জুতা পায়ে দিয়েছিলেন তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। মোট চার জোড়া জুতা টিকে আছে। সেগুলো মধ্যে স্মিথসোনিয়ানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টরিতে এক জোড়া প্রদর্শীত হয়েছে। নিলামে বিক্রি হওয়া জুতা জোড়া সংগ্রাহক মাইকেল শ এই জুতোজোড়া মিনেসোটার গ্র্যান্ড র্যাপিডসে অবস্থিত জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামে ধার দিয়েছিলেন।
সেখান থেকে ২০০৫ সালে জুতা জোড়া চুরি হয়ে যায়। পেশাদার চোর টেরি জন মার্টিন হাতুড়ি দিয়ে কাচের বাক্স ভেঙে জুতা চুরি করেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, ১০ লাখ ডলারের বিমা করা এই জুতা জোড়া হয়তো রত্ন দিয়ে বানানো। কিন্তু তিনি যখন গোপন বিক্রি করতে যান, জানতে পারেন জুতায় রত্ন নেই বরং কাচ ও চুমকি দিয়ে বানানো হয়েছে জুতা জোড়া। এরপর ১৩ বছর এর কোনো খোঁজ ছিল না। ২০১৮ সালে এফবিআই একটি বিশেষ অভিযানে জুতা জোড়া উদ্ধার করেন। জুতা চুরির দায় স্বীকার করেন টেরি জন মার্টিন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ