বিশ্ব ইতিহাসে তিনিই বোধ হয় সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম হত্যাকারী। মাত্র ২৮ দিনে সাত হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেন এই ঘাতক। মানুষ হত্যা তার কাছে কোনো বিষয়ই ছিল না। এমনকি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডেও তার নাম উল্লেখিত আছে। তিনি ছিলেন একজন রাশিয়ান অফিসার।
তার নাম ভ্যাসিলি ব্লোখিন। ১৯২৬ সালে জোসেফ স্টালিন ক্ষমতা গ্রহণের পর নৃশংস এই অফিসার নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তার অধীনে একটি দলও ছিল, যারা কষাইয়ের মতো স্টালিনের আদেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাত হাজার মানুষকে তিনি হত্যা করেন। ইতিহাসের তথ্যানুসারে, তিনি প্রথম যুদ্ধের সময় থেকেই মানুষ হত্যা করা শুরু করেন। তখন তিনি জারিস্ট আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকেই তার নাম হয়ে যায় -ব্ল্যাক ওয়ার্ক। ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ড কাটিন গনহত্যা বলে বিবেচিত।
এনকেভিডির সব উচ্চ পদস্থ অফিসারকে নিজ হাতে নির্মমভাবে হত্যা করেন ব্লোখিন। এরপর তিনি নিজেই এনকেভিডি এর প্রধানে পরিণত হয়ে যান। তাকে সবাই জল্লাদ হিসেব ডাকত। স্টালিনের নির্দেশ মতো অনেক রাজনৈতিক নেতাদেরকে হত্যা করেন তিনি। তবে তার অতীতের সব হত্যাকাণ্ডকে ছাপিয়ে যায় ১৯৩৯ সালের গনহত্যা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানি পোল্যান্ড দখল করে। তখনও রাশিয়ানরা যুদ্ধে যোগ দেয়নি। তবে ভ্যাসিলি ব্লোখিনের নেতৃত্বে রাশিয়ান সৈন্যরা পোল্যান্ডের বর্ডারে ঢুকে ২০ হাজার পোলিশ সৈন্যকে গ্রেফতার করে। এর কিছুদিন পর থেকে শুরু হয় নৃশংস গণহত্যা।
স্টালিন ১৯৩৯ সালের ৫ মার্চ পোলিশ সৈন্যদের মধ্যে থাকা উচ্চ পদস্থ অফিসারদের হত্যার নির্দেশ দেয়। আর এই হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় নিযুক্ত ছিলেন স্টালিনের কাছের মানুষ ব্লোখিন। নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ৫ মার্চ থেকে পরবর্তী ২৮ দিনের মধ্যে ভ্যাসিলি ব্লোখিন নিজেই হত্যা করেন ৭ হাজার পোলিশ অফিসার।
সবচেয়ে লোমহর্ষক বিষয় হলো, কোনো বিলম্ব ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে এবং দ্রুত মানুষকে মারতে পছন্দ করতেন ব্লোখিন। এনকেভিডি নীতি এবং অপারেশন অনুযায়ী, দিনে তারা বিশ্রাম নিতেন এবং রাত থেকে ভোর অব্দি চলত হত্যাকাণ্ড। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার জন্য ব্লোখিন একটি ঘর তৈরি করেছিলেন। যেটি ছিলো সাউন্ডপ্রুফ রুম অর্থাৎ ঘরের ভেতরের শব্দ বাইরে বের হবে না।
ব্লোখিন এবং তার দল প্রতি রাতে ১০ ঘণ্টা বিরতি ছাড়াই ৩০০ বন্দি অফিসারকে হত্যা করতেন। প্রতি তিন মিনিটে গড়ে একজন বন্দীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। এরপর ২-৩টি ট্রাকে করে ফাঁসি দেওয়া লাশগুলোকে নিয়ে যাওয়া হত বড় গর্তের কাছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বুলডোজারের নিচে পিষে ফেলা হত মৃতদেহগুলোকে।
প্রতি রাতে ২৪-২৫টি পরিখা খনন করা হত আশেপাশের এলাকায়। যেগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৮-১০ মিটার (২৬ থেকে ৩৩ ফুট) ছিল। রাতে মৃতদেহগুলো ট্রাকে চাপিয়ে প্রতিটি পরিখায় ফেলে দিয়ে ভোর হওয়ার আগেই মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হত। ভোরে ব্লোখিন তার অধনিস্ত সৈন্যদের সঙ্গে ভদকা উৎসবে মেতে উঠতেন।
১৯৪০ সালের ২ এপ্রিল, জোসেফ স্টালিন একটি রেড ব্যানার অব অর্ডার এবং মাসিক বেতন প্রিমিয়াম দিয়েছিলেন ব্লোখিনকে। ১৯৪২ সালে স্থানীয় শ্রমিকরা কাটিনের কাছে কোজেলস্কে পোলিশ সৈন্যদের এই গণকবরের সন্ধান পায়।
তখনো তাদের ধারণা ছিল না, এই কবরে কত মানুষের মৃতদেহ আছে! এরপর হাজার হাজার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় গণকবর থেকে। স্টালিনের মৃত্যুর পর রহস্যজনকভাবে ১৯৫৫ সালে ব্লাকিনের মৃত্যু হয়।
ইতিহাসে ২৮ দিনের মধ্যে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করার রেকর্ড গড়েন ব্লোখিন। ২০১০ সালে ‘মোস্ট প্রলিফিক এক্সিকিউশনার’ হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ব্লোখিনের নাম উঠে আসে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি