বাংলা৭১নিউজ,খেলাধুলা ডেস্ক: রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য দল ঘোষণার ধুম চলছে। এই সময়টাতে দল নিয়ে শোরগোল হবে না তা কি আর হয়! কদিন আগে ফ্রান্সের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হলো। তাতে অ্যান্থনি মার্শিয়ালের মতো ফুটবলার সুযোগ না পাওয়াতে সেটা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এখন নতুন ইস্যু আর্জেন্টিনার দলে মাওরো ইকার্দির সুযোগ না পাওয়া।
ইকার্দিকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে দিয়েছেন হোর্হে সাম্পাওলি। আর্জেন্টিনা কোচের এই সিদ্ধান্তে সমালোচনা হচ্ছে অনেক। চলতি মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম দেখিয়েছেন ইকার্দি। লিগে ৩৪ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২৯টি। কিন্তু তারপরও তার জায়গা হয়নি আর্জেন্টিনা দলে।
ইকার্দির বদলে মেসির সঙ্গে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে জায়গা পেয়েছেন সার্জিও আগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইন ও পাওলো দিবালা। তিনজনই নিঃস্বন্দেহে বড় তারকা। কিন্তু প্রশ্নটা উঠছে তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। মৌসুমের মধ্যভাগটা বেজায় বাজে কেটেছে দিবালার। টানা বার্জে পারফরমের কারণে জুভেন্টাসের সেরা একাদশ থেকে বাদও পড়তে হয়েছিল দিবালাকে। তাছাড়া মেসির সঙ্গে পজিশনও সাংঘর্ষিক।
আর হিগুয়েইনকে তো আর্জেন্টিনা সমর্থকরাই দলে চান না। বড় ম্যাচে সহজ সুযোগ মিস করাতে হিগুয়েইন ‘অপ্রতিদ্বন্দ্বী’ খেতাবই পেয়েছেন! গত বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। ওই গোলটা করলে বিশ্বকাপই হয়তো জিততে পারত আর্জেন্টিনা। গত দুই কোপা আমেরিকার ফাইনালেও গোল মিস করেছেন হিগুয়েইন। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের অনেকে বলেন, হিগুয়েইনের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে গত চার বছরে একটি বিশ্বকাপ ও দুটি কোপা আমেরিকা শিরোপা জমা হতো আর্জেন্টিনার শো কেসে।
আবার চলতি মৌসুমে ক্লাবের হয়েও খুব বেশি উজ্জলতা ছড়াতে পারেননি হিগুয়েইন। জুভেন্টাসের হয়ে লিগে ৩৫ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ১৫টি। সব মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে করেছেন ২৩ গোল। হিগুয়েইনের এই ২৩ গোলের বড় একটা অংশ মৌসুমের প্রথমভাগে করা।
এক সার্জিও আগুয়েরোই যা একটু ধারাবাহিক। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে সব মিলিয়ে ৩৯ ম্যাচ খেলে ৩০ গোল করেছেন আগুয়েরো। তবে দারুণ ফর্মে থাকলেও আগুয়েরোকে নিয়ে ভয় কম নয়। কারণ হাঁটুর ইনজুরির কারণে গত মার্চ থেকে মাঠের বাইরে তিনি। পুরো ফিট হয়ে আগুয়েরো বিশ্বকাপে যাচ্ছেন কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে। আবার বিশ্বকাপের আগে ফিট হলেও এতোগুলো মাস ফুটবলের বাইরে থেকে কতোটা আলো ছড়াতে পারবেন সেটা নিয়ে ভয় থেকেই যাচ্ছে।
আগুয়েরো ফিট থাকলে তাকেই হয়তো মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে চাইবেন সাম্পাওলি। তবে অনেকদিন মাঠের বাইরে থাকা আগুয়েরো যদি প্রত্যাশা মেটাতে না পারেন তাহলে আস্থা রাখতে হবে বারবার অনাস্থার পরিচয় দেয়া হিগুয়েইনের ওপর। এমন ঝুঁকি এড়াতে ইকার্দিকে দলে রাখা উচিত ছিল কি? ইকার্দি দলে থাকলে মেসির ওপর থেকে চাপও হয়তো কিছুটা কমতো।
আর্জেন্টিনার হয়ে গত চার বছরে মাত্র পাঁচটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন ইকার্দি। এই পাঁচ ম্যাচে নিয়মিত গোল না পেলেও দেখিয়েছেন মেসিকে আলগা করে দেওয়ার কৌশল ভালো করেই জানা আছে তার। অর্থাৎ তার পায়ে যখন বল থাকবে তখন দু-তিনজন ডিফেন্ডার যেন তাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অন্য দিকে ফাঁকা হয়ে যান মেসি। কিন্তু হিগুয়েইনের ক্ষেত্রে একই কাজ দেখা যায়নি ঠিকভাবে।
ইকার্দি বাতাসেও খেলেন ভালো। হেডে দারুণ দক্ষতা ছিল ২৫ বছর বয়সী তারকার। আর্জেন্টিনা খুব কমই কর্নার কাজে লাগাতে পারে। তার বড় কারণ মেসি, হিগুয়েইন, আগুয়েরোরা সেভাবে হেডে উজ্জল নয়। ইকার্দিকে নিয়ে সেই জায়গাটাতেও এগিয়ে থাকতে পারত আর্জেন্টিনা। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইকার্দিকে দলে না রেখে হয়তো বড্ড ভুলই করলেন হোর্হে সাম্পাওলি। বিশ্বকাপে এই ভুলের হয়তো মূল্যও দিতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
বাংলা৭১নিউজ/জেড এইচ