ব্যাংকগুলো এসএমই খাতে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন প্রণোদনা তহবিলের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাকে (এমএফআই)। করোনা মহামারির ক্ষতি মোকাবিলা করে অনু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পর্যায়ের উদ্যোক্তারা যাতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন সে লক্ষ্যে আলাদা ১০ হাজার টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হচ্ছে। আর এই অর্থ বিতরণ হবে ক্ষুদ্র ঋণ ইনস্টিটিউটের (এমএফআই) মাধ্যমে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত অনলাইন আলোচনায় এমন তথ্য জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবারই (১৪ জানুয়ারি) মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে তহবিলের প্রস্তাব পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তা অনুমোদন করেছে। কেবিনেট থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে প্রস্তাবনা, যা শিগগিরই অনুমোদন হবে বলে আশা করেন তিনি।
আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার এসব প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তারা অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। নতুন এ তহবিলের ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ যার মধ্যে ৪ শতাংশ দিবেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আর বাকি ৫ শতাংশ যাবে সরকারের ভর্তুকি হিসেবে। আর এবারের প্রণোদনা তহবিলের ঋণ বিতরণ করা হবে ব্যাংকের পরিবর্তে ক্ষুদ্র অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এসএমই’র জন্য প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি পুরোটা। ব্যাংকগুলোকে বারবার চাপ দিয়েও ঋণ বিতরণে প্রত্যাশিত গতি আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তারমতে, এখানে ব্যাংকের কিছুটা উদাসীনতা যেমন ছিলো তেমনি তাদের কাছে উদ্যোক্তাদের সঠিক তথ্য না থাকাও বড় কারণ। এসএমই ফাউন্ডেশনও সব তথ্য দিতে পারেনি।
এসময় পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, সিএমএসএমই থেকে সিএমই (কটেজ ও মাইক্রো) খাতকে আলাদা করতে হবে। কারণ এসএমই অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক, তবে সিএমই অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি উদ্যোগ। এদের চাহিদা ভিন্ন ধরণের। এসব উদ্যোক্তারা প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাননা বললেই চলে, তাদের ঋণ দেওয়াও ব্যাংকের জন্য কঠিন। তাদের অর্থায়ন করতে এমএফআই (মাইক্রোফাইনান্স ইনস্টিটিউট) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
খলীকুজ্জামান বলেন, এবার ব্যাংকগুলোকে বাদ দেয়ার পেছনে কারণ হিসেবে ৫,৭ ও ১০ লাখ টাকার ঋণ দিতে তাদের অনীহা আছে। তাদের জনবল, তথ্য যাচাই ও নীবিড়ভাবে এসব ছোট উদ্যোক্তার সাথে কাজ করার সক্ষমতা কম।
তিনি বলেন, পিকেএসএফ নতুন গঠিত তহবিল বিতরণে দেশব্যাপী তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও পার্টনার সংগঠনের মাধ্যমে দ্রুত ও কার্যকরভাবে বিতরণ করতে পারবে। এসব ঋণ পরিশোধের হারও বেশি। গ্রাহকদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ‘করোনাকালীন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনার আয়োজন করা হয়। ওয়েবিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আস্থা রেখে পিকেএসএফসহ সকল প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করায় সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনেও পিকেএসএফে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার পিকেএসএফ-এর ওপর আস্থা রেখে ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করেছে যার প্রথম কিস্তির অর্থ ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি অর্থ ছাড়করণ প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে তিনি জানান।
করোনাকালে ফাউন্ডেশনের ভূমিকা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের জানান, পিকেএসএফ করোনাকালে প্রান্তিকপর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে, যার মধ্যে মাঠপর্যায়ে এক কোটি ১০ লাখ গ্রাহকের ঋণের কিস্তি আদায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়। এছাড়াও সহযোগী সংস্থাগুলো নিজস্ব তহবিলের প্রায় ৩০ কোটি টাকার বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৪ কোটি টাকা অনুদানও দিয়েছে পিকেএসএফ। সহযোগী সংস্থাসমূহ গতবছর (২০২০) জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মাঠপর্যায়ে প্রায় ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এই ছয় মাসে পিকেএসএফ নতুন অর্থ প্রবাহ করেছে প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা।
ভার্চুয়াল এইসভায় আরও বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জসীমউদ্দিন। এছাড়া, উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার নির্বাহী প্রধানরা। প্রায় ৫০০ জনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ পিকেএসএফ ও এর সহযোগী সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে